বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় যেসব বিষয় শিক্ষার্থীদের তাড়া করে ফেরে তার মধ্যে বাংলা ২য় পত্রের ব্যাকরণ একটা। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা হলেও ব্যাকরণ অবৈজ্ঞানিক এবং জটিল হবার কারণে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাকরণভীতি থেকেই যায়। প্রস্তুতির সময় অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না কোনগুলো বেশি দরকারি, কোথায় জোর দেয়া দরকার। কেউ বিরচন অংশে গুরুত্ব দেয়, কেউ ব্যাকরণে। এখানে আমরা বিগত বছরগুলোর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন যাচাই-বাছাই করে কোথায় গুরুত্ব দেয়া দরকার, কোন বিষয়গুলো থেকে পরীক্ষকরা প্রশ্ন করতে পছন্দ করেন সেটার একটা ধারণা তৈরি করার চেষ্টা করেছি। নিয়মিত সর্বাধিক প্রশ্ন আসা এমন সব গুরুত্বপূর্ণ ৫টি অধ্যায় নিয়ে এখানে আমরা আলোচনা করব।
ভাষা
ভাষা যদিও একটি বিস্তৃত অধ্যায়, তবে এই বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বেশির ভাগ প্রশ্ন আসে বিভিন্ন শব্দের ভাষাগত উৎস থেকে। যেমন: ‘আনারস’ কোন ভাষা থেকে আগত শব্দ, ‘আদালত’ কোন ভাষার শব্দ। তাই বাংলা ভাষায় আগত বিভিন্ন বিদেশি শব্দসমূহ চিনে রাখা জরুরি। বিশেষ করে আরবি, ফারসি শব্দ সম্পর্কে ধারণা পাকাপোক্ত করতে হবে। এরপরেই বাংলা ভাষার ইতিহাস, উৎপত্তিসংক্রান্ত বিষয়ে জোর দেয়া প্রয়োজন।
উদাহরণ: প্রশ্নব্যাংকে ভাষাসংক্রান্ত সব প্রশ্ন
সমাস
ব্যাকরণের কয়েকটি ধারণা যেগুলো ভালো করে বোঝা প্রয়োজন তার মধ্যে সমাস একটি। সমাসের প্রকরণগুলোর উদাহরণ বুঝে বুঝে না পড়ে শুধু মুখস্থ চর্চা আখেরে লাভের চেয়ে ক্ষতিই ডেকে নিয়ে আসবে। ধারণা স্পষ্ট হয়ে গেলে মুখস্থের চেয়ে কম সময়ে এই অধ্যায়ের অনুশীলন সম্পূর্ণ করা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, ভর্তি পরীক্ষায় শুধু সঠিক সমস্তপদ বা এর সঠিক প্রকারভেদ আসে না, পাশাপাশি সঠিক ব্যাসবাক্য কোনটি তা নির্ধারণ করার প্রশ্নও আসে। এ কারণে সমস্তপদ ও ব্যাসবাক্য উভয় দিক থেকেই অনুশীলন করতে হবে। সমাসের বিশেষ কয়েকটি প্রকার, উপপ্রকার যেমন বহুব্রীহি, উপমান-উপমেয় কর্মধারয় সমাস ইত্যাদি ভালো করে অনুশীলন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি নিপাতনে সিদ্ধ সমাসের উদাহরণগুলো মাথায় রাখতে হবে।
উদাহরণ : প্রশ্নব্যাংকে সমাসের উপর সব প্রশ্ন
শুদ্ধি-অশুদ্ধি
ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নে কয়েক ধরনের শুদ্ধি-অশুদ্ধি সম্পর্কিত প্রশ্ন দেখা যায়—
১. শব্দের বানান
২. বাক্যের গঠন
৩. শব্দের উচ্চারণ
এসবের ভুল-সঠিক নির্ধারণ করাটাই হলো মূল কাজ। শব্দের বানানের ক্ষেত্রে ণত্ব-ষত্ব বিধান, বাংলা একাডেমি প্রণীত বাংলা বানানের নিয়মাবলী জেনে রাখতে হবে। বর্তমানে প্রচলিত, ব্যবহৃত ভুল বানানগুলো জেনে রাখতে হবে। যেসব বানান সচরাচর ভুল হয়, সেগুলো বারবার অনুশীলন করা প্রয়োজন। বাক্যের ভুল গঠনের ক্ষেত্রে বিশেষ্য, বিশেষণ ও ক্রিয়াপদের সঠিক ব্যবহার জানতে হবে। আর উচ্চারণের ক্ষেত্রে মূলত সংবৃত ও বিবৃত উচ্চারণ সম্পর্কে ধারণা রাখলেই চলবে।
বাক্য সংকোচন
এক কথায় প্রকাশ বা বাক্য সংকোচন থেকে একাধিক প্রশ্ন আসতে দেখা যায়। বিশেষ করে অপরিচিত, অপ্রচলিত শব্দ পরীক্ষায় বেশি আসে। তাই এসব শব্দের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। আর যেসব বাক্যের অন্তর্গত শব্দের সাথে তার সংকুচিত শব্দের মিল নেই সেগুলোতে জোর দিতে হবে। কারণ প্রশ্নে সদৃশ শব্দের বাক্য সংকোচনের (যেমন: অদম্য—যাকে দমন করা যায় না) চেয়ে বিসদৃশ শব্দের বাক্য সংকোচন (যেমন: অনূঢ়া—যে মেয়ের বিয়ে হয়নি) আসার হার অনেক বেশি।
প্রশ্নব্যাংকে সব বাক্য সংকোচন প্রশ্ন
উপসর্গ
উপসর্গগুলো কোন অর্থে শব্দে ব্যবহৃত হচ্ছে তা মনে রাখা জরুরি। এ ধরনের প্রশ্নই সবচেয়ে বেশি আসে। কোন শব্দগুলো উপসর্গযোগে গঠিত হয়েছে তাও খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া বিদেশি উপসর্গ অর্থাৎ কোনটি ফারসি কোনটি আরবি উপসর্গ—এক্ষেত্রে বিভ্রান্তি থাকলে, কাটাতে হবে।
প্রশ্নব্যাংকে উপসর্গ সম্পর্কিত সব প্রশ্ন
এ পাঁচটি বিষয়ের পর সবচেয়ে বেশি আসা প্রশ্ন পর্যালোচনায় দেখা গেছে গুরুত্বপূর্ণ আরো কয়েকটি টপিক হলো - বাগধারা, সন্ধি, ধ্বনি ও বর্ণ প্রকরণ, সমার্থক শব্দ, কারক ও বিভক্তি। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পূর্ণাঙ্গ প্রশ্ন পর্যালোচনা দেখতে চোখ রাখুন edpdbd.org তে।