সাধারণভাবে অনেক শিক্ষার্থীরই এমন একটা ধারণা হয়, বাংলা প্রথম পত্র অন্যান্য সাবজেক্টের তুলনায় অনেক সহজ। তাই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে এই ধারণার প্রভাবে অন্য বিষয়ে যতটা জোর আর মনোযোগ থাকে, বাংলা প্রথম পত্রের বেলায় তা একটু কমই থাকে। এই অবহেলার ফল পাওয়া যায় পরীক্ষার হলে; যেমন — প্রশ্ন কমন না পড়া, বা কমন পড়লেও কোন উত্তরটা হবে, সেটা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে পড়া। কিন্তু প্রস্তুতিতে কিছু বিষয়ে বাড়তি নজর আর কৌশল অনুসরণ করলে বাংলা প্রথম পত্রে ভালো করা আসলেও সহজ।
আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ১০ বছরের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, নির্দিষ্ট কয়েকটা গল্প, কবিতা এবং প্রবন্ধ থেকে প্রতি বছরই প্রশ্ন আসে, বলা যায় সবচে বেশি প্রশ্ন আসে। এরকম ৫টি গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ আমরা চিহ্ণিত করেছি। প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে আরো একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি, সেটা হলো — প্রবন্ধ, গল্প বা কবিতার কোন কোন বিষয়ে জোর দিতে হবে।
সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন হিসাবে চিহ্ণিত এরকম ৫টি গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ এবং এদের প্রস্তুতিতে কী কৌশল ব্যবহার করা দরকার, তা দেখে নেয়া যাক:
১. এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ এখানে প্রচুর গাছপালা, নদী, পাখিসহ আরও অনেক কিছুর নাম ব্যবহার করেছেন। দিয়েছেন বিভিন্ন উপমা। এসব নাম ভালো করে মনে রাখা দরকার। যেমন: কবিতায় কী কী গাছের নাম আছে, কোন নদী অবিরাম জল দেয়, কোন পাখি হাওয়ায় চঞ্চল—এসব জেনে রাখতে হবে। কবিতায় কিসের সাথে কিসের তুলনা দেয়া হয়েছে তাও মনে রাখা জরুরি। যেমন কবির মতে, ‘লক্ষ্মীপেঁচা ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট, তরুণ’।
২. বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ
মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবদ কাব্য থেকে নেয়া এই কবিতাটি ভাষাগত দিক থেকে তুলনামূলকভাবে কঠিন এবং প্রচুর অপ্রচলিত শব্দের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। এসব শব্দের অর্থ জেনে রাখা খুব জরুরি। এখানকার চরিত্রগুলোকে কবি কী নামে বিশেষায়িত করেছেন তা সঠিকভাবে জানতে হবে। যেমন রাবণি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে, বাসবত্রাস কে ইত্যাদি জানতে হবে। উক্তি অর্থাৎ কোন কথাটি কে বলেছেন তা মাথায় রাখতে হবে। চরিত্রগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক অর্থাৎ কে কার ভাই, বাবা, স্ত্রী, মা—এসব ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। যেকোনো কবিতার ক্ষেত্রে তুলনা বা উপমার ব্যবহার লক্ষ করতে হবে। সবশেষে, লেখক পরিচিতি ও পাঠ পরিচিতির প্রতি যত্নবান হতে হবে।
৩. বিড়াল
বিড়াল গল্পটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি এর লেখক সম্পর্কেও জানা জরুরি। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবন ও সাহিত্যকর্ম থেকে প্রতি বছর একাধিক প্রশ্ন আসে। বিড়ালের মূল দুটি চরিত্র কারা, কী কথা বলেছেন, কাকে কী উপদেশ দিয়েছেন, কমলাকান্ত কোন বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম বলেছেন—এসব খেয়াল রাখতে হবে। মূল চরিত্রের পাশাপাশি পার্শ্ব চরিত্রের কর্মকাণ্ডও মনে রাখতে হবে।
৪. অপরিচিতা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জীবনী, গ্রন্থসমূহ সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। অপরিচিতা গল্পের খুঁটিনাটি, যেমন: বিবাহের কত দিন আগে অনুপমের আশীর্বাদ হয়, শম্ভুনাথের বয়স কত—এ রকম প্রশ্ন আসা খুব স্বাভাবিক। বরাবরের মতো উক্তির ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হবে। গদ্যের ক্ষেত্রে কোন বাক্যে কোন ধরনের ভাব প্রকাশ পেয়েছে তা জানা জরুরি।
৫. আমার পথ
কাজী নজরুলের ইসলাম এই প্রবন্ধে ‘আমি’ সত্তাকে উপলব্ধি করার মাধ্যমে সত্যকে জয় করার কথা বলেছেন। কাজী নজরুলের ক্ষেত্রেও তার সাহিত্যকর্ম সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। উত্তম পুরুষে রচিত আমার পথ প্রবন্ধে প্রচুর উক্তি আছে যেগুলো মনে রাখা বাঞ্চনীয়। কেননা, উক্তি থেকে অনেক প্রশ্ন ও শূন্যস্থান পূরণ আসতে পারে। যেমন: আত্মাকে চিনলে কী আসে? স্পষ্ট কথা বলায় কী থাকে?—এ ধরনের প্রশ্ন হওয়া স্বাভাবিক।
ইডিপিডিতে অনুশীলন
ঠিক একই পদ্ধতিতে আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করে প্রতিটি বিষয়ের (গল্প/কবিতা/প্রবন্ধ) প্রশ্নের ধরন বের করেছি, এরপর সে অনুসারে অধ্যায়ভিত্তিক কুইজ তৈরি করেছি। আমাদের ওয়েবসাইটের মডেল টেস্ট অংশে বিষয়ভিত্তিক কুইজগুলো অনুশীলনের সুযোগ রয়েছে। সময় নির্ধারিত এসব কুইজের মাধ্যমে অনুশীলনের পাশাপাশি আপনারা সময়ের সঠিক ব্যবহারও শিখতে পারবেন আশা করি। এভাবে নিয়মিত অনুশীলন করলে বাংলা ১ম পত্রে আত্মবিশ্বাসী হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।