পমোদরো পদ্ধতি কী বলার আগে একটু ইমাজিন করা যাক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা প্রস্তুতিতে কোথায় হচপচ লাগে, হাবু-ডুবু খাওয়ার দশা হয়। এসময় বিশাল একটা সিলেবাস শেষ করতে হয় অল্প সময়ে। মানে সময় যেটুকু আছে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য তার সর্বোচ্চ কীভাবে ব্যবহার করা যায়, মাথায় খেলে না, কেবল চাপ লাগে। আবার লম্বা সময় ধরে একটানা পড়লে লাগে সুপার টায়ার্ড। অনেকেই অত্যধিক চাপে, চিন্তায় হতাশ হয়ে পড়েন।
এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যেই আছে বিশেষ পদ্ধতিতে পড়াশুনা। দীর্ঘক্ষণ পড়াশুনার এরকম একটি জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো পমোদরো পদ্ধতি। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উপর চালানো এক গবেষণায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই এটিকে বেশ কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে দাবি করছেন। তাদের মতে, প্রতিদিনের বিভিন্ন রকম কাজে সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা বা টাইম ম্যানেজম্যান্টে এটি খুবই কার্যকরী।
ইতালীয় শব্দ পমোদরো আসলে টমেটোর প্রতিশব্দ। তো টমেটোর সাথে পড়ালেখার সম্পর্ক কী? এর উত্তর পাওয়া যাবে এর আবিষ্কারক ফ্রান্সিসকো সিরিলোর কাছে। আশির দশকে তিনি যখন ছাত্র, আপনাদের মতো তিনিও পড়াশোনার চাপে হিমশিম খাচ্ছিলেন। তখন তিনি বিরতি দিয়ে দিয়ে পড়াশুনা লম্বা সময় চালানোর একটা বুদ্ধি বের করলেন। সিরিলো ২৫ মিনিট পর পর ছোট একটা বিরতি নিয়ে পড়াশোনা করতে লাগলেন। ধরা যাক এমন - আপনি টানা ২৫ মিনিট পড়লেন, এরপর ৫ মিনিটের বিরতি নিলেন, এরপর আবার শুরু করলেন পড়াশুনা। তিনি দেখলেন, লম্বা সময় নিজেকে পড়াশুনার মধ্যে রাখার এটা একটা কাযর্করী উপায়। লম্বা সময় পড়াশুনার মধ্যে থাকা যায়, আবার বিরক্তিকর এবং ক্লান্তিকর মনে হয় না।
এই বিরতির সময়টাকে সিরিলো নাম দিলেন পমোদরো। কারণ তখন তার কাছে টমেটোর মতো একটা কিচেন টাইমার ছিল, সেটাতে তিনি বিরতি নেয়ার সময় সেট করতেন। এভাবে ৪টি পমোদরো বা বিরতির পর তিনি আরেকটু বড় বিরতি নিতেন। এরপর আবার আগের মতো শুরু করতেন। এটা পমোদরো পদ্ধতি হিসাবে পরিচিতি পেয়ে গেছে। বর্তমানে পমদরো পদ্ধতি অনুযায়ী তৈরি অনেক অ্যাপ প্লেস্টোরে পাওয়া যায়।
সেরকমই কয়েকটি অ্যাপ নিয়ে ধারণা নেয়া যাক, হয়তো কোন কোনটাকে আপনার মনে হতে পারে এটাই তো সমাধান যা আমি মনে মনে খুঁজছিলাম!
১. ফোকাস টু ডু
পমোদরো পদ্ধতির মতো এই অ্যাপে ২৫ মিনিটের মনোযোগি সময়, ৫ মিনিটের বিরতি ঠিক করা থাকে। ৪টা পমোদরোর পর ১৫ মিনিটের দীর্ঘ বিরতিও ঠিক করা থাকে। তবে এই সময়গুলোকে আপনি আপনার ইচ্ছামত কমিয়ে-বাড়িয়ে নিতে পারবেন। পমোদরো টাইমারের পাশাপাশি এখানে টাস্ক যুক্ত করার সুবিধা আছে। টাস্কের ভেতর সাবটাস্ক, ডেডলাইন, এমনকি চাইলে দিন তারিখসহ প্রজেক্টও শুরু করার সুবিধা আছে। এছাড়া ‘রিপোর্ট’ পাতায় টাস্ক বা পমোদরোর সব হিসাবনিকাশ পাওয়া যাবে দৈনিক, সাপ্তাহিক থেকে শুরু করে একেবারে বাৎসরিক ভিত্তিতে। এর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কী পরিমাণ মনোযোগি সময় কেটেছে পড়াশুনায়; টাস্ক, সাব টাস্ক এবং ডেডলাইন ব্যবহারের মাধ্যমে বোঝা যাবে কতগুলো চ্যাপ্টার (যদি পড়ার সময় একেকটা চ্যাপ্টারকে টাস্ক হিসাবে রাখেন) শেষ করেছেন এবং কত সময়ের মধ্যে। চাইলে স্ট্রিক্ট মোড চালু করে পমোদরো টাইমার চলার সময় অন্যান্য অ্যাপ বন্ধ রাখা যাবে এটাতে।
লিংক: https://play.google.com/store/apps/details?id=com.superelement.pomodoro
২. ফরেস্ট
ফরেস্ট একটি ভিন্নধর্মী, মজার অ্যাপ। এখানে প্রতিটা কাজ একটা চারাগাছ হিসেবে আবির্ভূত হয়। সর্বনিম্ন ১০ মিনিট থেকে টাইমার চালু করা যায়। কতক্ষণ পড়বেন সে অনুযায়ী টাইমার চালু করে দিলে দেখা যাবে একটা গাছও বড় হচ্ছে ধীরে ধীরে। কিন্তু মাঝপথে টাইমার বন্ধ করে দিলে গাছ মারা যাবে। এভাবে বারবার টাইমার সেট করে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যাবে, আর তৈরি হতে থাকা বনটা আপনাকে দেখাবে আপনার মনোযোগিতার চিত্র।
একটা উইন্ডোতে ফরেস্ট বা বনের কী অবস্থা তা দেখা যাবে, প্রতিদিন কত মিনিট পড়া হলো, কয়টা গাছ বাড়লো, কয়টা গাছ মরলো—সব হিসাব বন আকারে, গ্রাফ আকারে দেখা যাবে। চাইলে বিভিন্ন রকম কাজের (স্টাডি, ওয়ার্ক, স্পোর্টস ইত্যাদি) জন্য বিভিন্ন রকম গাছ লাগানো যাবে। তবে এই অ্যাপে বিরতির সময় আগে থেকে ঠিক করা যায় না। তাই খেয়াল রাখতে হবে বিরতি যেন বেশিক্ষণ না গড়ায়।
লিংক: https://play.google.com/store/apps/details?id=cc.forestapp
৩. মিনিমালিস্ট পমোদরো টাইমার
নাম দেখেই বোঝা যাচ্ছে অ্যাপটি কেমন হতে পারে। মনোযোগ ভেঙে যাওয়া এড়াতে অ্যাপটি ডিজাইন করা হয়েছে খুবই অনাড়ম্বর, মিনিমালভাবে। অ্যাপে ঢুকলেই টাইমার ছাড়া আর কিছু দেখা যাবে না, তবে ডানে বামে উপরে নিচে সোয়াইপ করার মাধ্যমে বিভিন্ন নির্দেশ দেয়া যাবে। অন্যান্য অ্যাপের মত এটাতেও আপনার কাটানো সময়ের পরিসংখ্যান পাওয়া যাবে। চাইলে বিভিন্ন লেবেল দিয়ে পড়ার বিষয় বা কাজের ধরনগুলো আপনি আলাদা করতে পারবেন এখানে।
লিংক: https://play.google.com/store/apps/details?id=com.apps.adrcotfas.goodtime
পমোদরো পদ্ধতি বিস্তারিত : https://eprints.lancs.ac.uk/id/eprint/153513/