কুইজ

শব্দের উৎপত্তিগত শ্রেণীবিভাগ
বাংলা ভাষার উৎপত্তি
তৎসম শব্দ
অর্ধ-তৎসম শব্দ
তদ্ভব শব্দ
দেশি শব্দ
বিদেশি শব্দ
আরবি শব্দ
ফারসি শব্দ
ইংরেজি শব্দ
পর্তুগিজ শব্দ
ফরাসি শব্দ
ওলন্দাজ শব্দ
গুজরাটি শব্দ
পাঞ্জাবি শব্দ
তুর্কি শব্দ
চিনা শব্দ
মায়ানমার/ বর্মি শব্দ
জাপানি শব্দ
মিশ্র শব্দ
শব্দের গঠনমূলক শ্রেণীবিভাগ
মৌলিক শব্দ
সাধিত শব্দ
অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ
ব্যুৎপত্তিগত অর্থ
ব্যবহারিক অর্থ
যৌগিক শব্দ
রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ
যোগরূঢ় শব্দ
নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন

 

শব্দের উৎপত্তিগত শ্রেণীবিভাগ

বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এই ৫টি বিভাজন সম্পর্কে জানার আগে বাংলা ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য জানা জরুরি।

বাংলা ভাষার উৎপত্তি: বাংলা ভাষার উৎপত্তি মূলত ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ থেকে। এই বংশের অন্যতম একটি শাখা সংস্কৃত। বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষার বংশেরই উত্তরসূরী। কিন্তু বাংলা ভাষা সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকে আসেনি। সংস্কৃত সবসময়েই ছিলো সমাজের সম্ভ্রান্ত মানুষদের ব্যবহৃত ভাষা। আর বাংলা শুরু থেকেই সমাজের নিম্ন স্তরের মানুষের ভাষা। এ থেকেই বোঝা যায় সংস্কৃত আর বাংলার মাঝেও কোনো ভাষা ছিলো। কিন্তু এ ব্যাপারে ভাষাবিদেরা একমত হতে পারেননি। পূর্বে সম্ভ্রান্ত মানুষেরা সংস্কৃত ব্যবহার করতো। আর সাধারণ মানুষ যে সব ভাষায় কথা বলতো, সেগুলোকে বলা হতো প্রাকৃত বা অপভ্রংশ ভাষা। অপভ্রংশ মানে বিকৃত, সংস্কৃত ভাষার শব্দকে মানুষ পরিবর্তন করে তাদের সুবিধামতো করে উচ্চারণ করতো বলে এগুলোকে পন্ডিতরা বলতেন অপভ্রংশ বা বিকৃত ভাষা। এগুলো আঞ্চলিক ভাষার মতোই একেক জায়গায় ছিলো একেক রকম। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা এসেছে গৌড়ীয় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে। আর ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, বাংলা এসেছে মাগধী অপভ্রংশ থেকে। এই অপভ্রংশগুলোতে সংস্কৃত ভাষার যে পরিবর্তিত বা বিকৃত রূপ পাওয়া যায়, তারই আরো পরিবর্তিত আর সহজ রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয় বাংলা ভাষা। দিন দিন মানুষের ব্যবহারের মধ্য দিয়ে আমাদের বাংলা ভাষাও অনেক সহজ হয়ে এসেছে। এবং তা আরো পরিবর্তিত হয়ে দিন দিন আরো সহজ ও সংক্ষিপ্ত হবে। পাশাপাশি নতুন নতুন প্রয়োজনে আরো অনেক নতুন শব্দও তৈরি হবে বা অন্য ভাষা থেকে আমাদের ভাষায় ঢুকে যাবে।

উৎপত্তিগত দিক দিয়ে শব্দের ৫টি বিভাজন হলো- তৎসম, অর্ধ-তৎসম, তদ্ভব, দেশি আর বিদেশি শব্দ

 

তৎসম শব্দ: সংস্কৃত ভাষার যে সব শব্দ প্রাকৃত বা অপভ্রংশের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়নি, বরং সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকেই বলা হয় তৎসম শব্দ। উদাহরণ- চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য,  

অনেক তৎসম শব্দেরই অর্ধ-তৎসম ও তদ্ভব রূপও বাংলায় ব্যবহৃত হয়। যেমন, সূর্য˃ সুরুয, মনুষ্য˃ মানুষ।

শুধু তৎসম শব্দেই ষ, ণ ব্যবহৃত হয়।

 

অর্ধ-তৎসম শব্দ: যে সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম। এগুলো সরাসরি সংস্কৃত ভাষা থেকেই কিছুটা সহজ আকারে গৃহীত হয়েছে। সংস্কৃত থেকে প্রাকৃত বা অপভ্রংশ ভাষার মাধ্যমে বাংলায় আসেনি। যেমন, জ্যোৎস্না˂ জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ˂ ছেরাদ্দ, গৃহিণী˂ গিন্নী, বৈষ্ণব˂ বোষ্টম, কুৎসিত˂ কুচ্ছিত।

 

তদ্ভব শব্দ: বাংলা ভাষা গঠনের সময় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে যে সব শব্দ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছিলো, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। অবশ্য, তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত ভাষায় থাকতে হবে। অর্থাৎ, যে সব শব্দ সংস্কৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে প্রাকৃত বা অপভ্রংশে ব্যবহৃত হয়েছিলো, পরে আবার প্রাকৃত থেকে পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। বাংলা ভাষার উৎপত্তির ইতিহাস থেকেই বোঝা যায়, মূলত এই শব্দগুলোই বাংলা ভাষা গঠন করেছে। আর তাই এই শব্দগুলোকে বলা হয় খাঁটি বাংলা শব্দ। যেমন, সংস্কৃত ‘হস্ত’ শব্দটি প্রাকৃততে ‘হত্থ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর বাংলায় এসে সেটা আরো সহজ হতে গিয়ে হয়ে গেছে ‘হাত’। তেমনি, চর্মকার˂ চম্মআর˂ চামার,

 

দেশি শব্দ: বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতো, সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ। এই আদিবাসীদের মধ্যে আছে- কোল, মুণ্ডা, ভীম, ইত্যাদি। মেমন, কুড়ি (বিশ)- কোলভাষা, পেট (উদর)- তামিল ভাষা, চুলা (উনুন)- মুণ্ডারী ভাষা

 

বিদেশি শব্দ: বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছে, বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অন্য ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যে কোনো ভাষার সমৃদ্ধির জন্য বিদেশি শব্দের আত্মীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এদিক দিয়ে বাংলা ভাষা বেশ উদারও বটে।

 

আরবি শব্দ : আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, ওযু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, হওবা, হসবি, যাকাত, হজ, হাদিস, হারাম, হালাল
আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায়

ফারসি শব্দ: খোদা, গুনাহ, দোযখ, নামায, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোযা
কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার, দোকান,দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, রসদ
আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাস, রফতানি, হাঙ্গামা

 

ইংরেজি শব্দ: প্রায় অপরিবর্তিত উচ্চারণে- চেয়ার, টেবিল
পরিবর্তিত উচ্চারণে- আফিম (opium), ইস্কুল (school), বাক্স (box), হাসপাতাল (hospitai), বোতল (bottle)

 

পর্তুগিজ শব্দ : আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি
ফরাসি শব্দ : কার্তুজ, কুপন , ডিপো, রেস্তোঁরা
ওলন্দাজ শব্দ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন (তাসের নাম)
গুজরাটি শব্দ : খদ্দর, হরতাল
পাঞ্জাবি শব্দ : চাহিদা, শিখ
তুর্কি শব্দ : চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা
চিনা শব্দ : চা, চিনি, লুচি
মায়ানমার/ বর্মি শব্দ : ফুঙ্গি, লুঙ্গি
জাপানি শব্দ : রিক্সা, হারিকিরি

 

 

এছাড়াও আরেকটি বিশেষ ধরনের শব্দ আছে। দুইটি ভিন্ন ধরনের শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে একত্রিত হলে ঐ নতুন শব্দটিকে বলা হয় মিশ্র শব্দ। এক্ষেত্রে যে দুইটি শব্দ মিলিত হলো, তাদের শ্রেণীবিভাগ চিনতে পারাটা খুব জরুরি। যেমন-
রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি)
হাট-বাজার (বাংলা+ফারসি)
হেড-মৌলভী (ইংরেজি+ফারসি)
হেড-পন্ডিত (ইংরেজি+তৎসম)
খ্রিস্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম)
ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি)
পকেট-মার (ইংরেজি+বাংলা)
চৌ-হদ্দি (ফারসি+আরবি)

 

শব্দের গঠনমূলক শ্রেণীবিভাগ

গঠন অনুসারে শব্দ ২ প্রকার-

মৌলিক শব্দ: যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে আর কোন শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। অর্থাৎ, যে সব শব্দকে ভাঙলে আর কোন অর্থসঙ্গতিপূর্ণ শব্দ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন- গোলাপ, নাক, লাল, তিন, ইত্যাদি।

 

এই শব্দগুলোকে আর ভাঙা যায় না, বা বিশ্লেষণ করা যায় না। আর যদি ভেঙে নতুন শব্দ পাওয়াও যায়, তার সঙ্গে শব্দটির কোন অর্থসঙ্গতি থাকে না। যেমন, উদাহরণের গোলাপ শব্দটি ভাঙলে গোল শব্দটি পাওয়া যায়। কিন্তু গোলাপ শব্দটি গোল শব্দ থেকে গঠিত হয়নি। এই দুটি শব্দের মাঝে কোন অর্থসঙ্গতিও নেই। তেমনি নাক ভেঙে না বানানো গেলেও নাক না থেকে আসেনি। অর্থাৎ, এই শব্দগুলোই মৌলিক শব্দ। ‘গোলাপ’ শব্দটির সঙ্গে ‘ই’ প্রত্যয় যোগ করে আমরা ‘গোলাপী’ শব্দটি বানাতে পারি। তেমনি ‘নাক’-র সঙ্গে ‘ফুল’ শব্দটি যোগ করে আমরা ‘নাকফুল’ শব্দটি গঠন করতে পারি।

 

সাধিত শব্দ: যে সব শব্দকে বিশ্লেষণ করলে অর্থসঙ্গতিপূর্ণ ভিন্ন একটি শব্দ পাওয়া যায়, তাদেরকে সাধিত শব্দ বলে। মূলত, মৌলিক শব্দ থেকেই বিভিন্ন ব্যাকরণসিদ্ধ প্রক্রিয়ায় সাধিত শব্দ গঠিত হয়।

 

মৌলিক শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে কিংবা প্রত্যয় বা উপসর্গ যুক্ত হয়ে সাধিত শব্দ গঠিত হয়। যেমন-

সমাসবদ্ধ হয়ে- চাঁদের মত মুখ = চাঁদমুখ

প্রত্যয় সাধিত- ডুব+উরি = ডুবুরি

উপসর্গযোগে- প্র+শাসন = প্রশাসন

 

অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ

শব্দের অর্থমূলক শ্রেণীবিভাগ জানার আগে শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা থাকা দরকার।

ব্যুৎপত্তিগত অর্থ: কোন শব্দ যে শব্দ বা শব্দমূল হতে গঠিত হয়েছে তার অর্থ দিয়ে শব্দটির যে অর্থ ধারণ করার কথা, তাকে শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বলে। অর্থাৎ, উৎপত্তিগত ভাবে শব্দটির যে অর্থ দাঁড়ায়, তাকেই ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বলে।

যেমন, ‘মধুর’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘মধু+র’ অর্থাৎ ‘মধু’ শব্দ হতে। তাই ‘মধুর’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হওয়া উচিত মধু সংশ্লিষ্ট কোন অর্থ। আর ‘মধুর’ শব্দের অর্থ ‘মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত’। অর্থাৎ, ‘মধুর’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বজায় থেকেছে।

আবার, ‘হস্তী’ শব্দটি গঠিত হয়েছে ‘হস্ত+ইন’ অর্থাৎ ‘হস্ত’ শব্দ হতে। তাই ‘হস্তী’ শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হওয়া উচিত হস্ত বা হাত সংশ্লিষ্ট। কিন্তু ‘হস্তী’ বলতে একটি বিশেষ পশুকে বোঝায়, যার আদপে কোন হাত-ই নেই। অর্থাৎ, শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ বজায় থাকেনি।

ব্যবহারিক অর্থ: কোন শব্দ প্রকৃতঅর্থে যে অর্থে ব্যবহৃত হয়, বা যে অর্থ প্রকাশ করে, তাকে সেই শব্দের ব্যবহারিক অর্থ বলে। যেমন, উপরের উদাহরণগুলোতে, ‘মধুর’ শব্দটির ব্যবহারিক অর্থ ‘মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত’, আর ‘হস্তী’র ব্যবহারিক অর্থ ‘একটি বিশেষ পশু’।

অর্থগত ভাবে শব্দসমূহকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়-

 

যৌগিক শব্দ: যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ একই, তাদের যৌগিক শব্দ বলে।

অর্থাৎ, শব্দগঠনের প্রক্রিয়ায় যাদের অর্থ পরিবর্তিত হয় না, তাদেরকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন-

মূল শব্দ

শব্দ গঠন (অর্থ)

অর্থ

গায়ক

গৈ+অক

যে গান করে

কর্তব্য

কৃ+তব্য

যা করা উচিত

বাবুয়ানা

বাবু+আনা

বাবুর ভাব

মধুর

মধু+র

মধুর মত মিষ্টি গুণযুক্ত

দৌহিত্র

দুহিতা+ষ্ণ্য (দুহিতা= মেয়ে, ষ্ণ্য= পুত্র)

কন্যার মত, নাতি

চিকামারা

চিকা+মারা

দেওয়ালের লিখন

 

রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ: প্রত্যয় বা উপসর্গ যোগে গঠিত যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ও ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন-

মূল শব্দ

শব্দ গঠন

ব্যুৎপত্তিগত অর্থ

ব্যবহারিক/ মূল অর্থ

হস্তী

হস্ত+ইন

হাত আছে যার

একটি বিশেষ প্রাণী, হাতি

গবেষণা

গো+এষণা

গরম্ন খোঁজা

ব্যাপক অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা

বাঁশি

বাঁশ+ইন

বাঁশ দিয়ে তৈরি

বাঁশের তৈরি বিশেষ বাদ্যযন্ত্র

তৈল

তিল+ষ্ণ্য

তিল থেকে তৈরি সেণহ পদার্থ

উদ্ভিদ থেকে তৈরি যে কোন সেণহ পদার্থ

প্রবীণ

প্র+বীণা

প্রকৃষ্টরূপে বীণা বাজায় যিনি

অভিজ্ঞ বয়স্ক ব্যক্তি

সন্দেশ

সম+দেশ

সংবাদ

মিষ্টান্ন বিশেষ

 

যোগরূঢ় শব্দ: সমাস নিষ্পন্ন যে সব শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ আর ব্যবহারিক অর্থ আলাদা হয়, তাদেরকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন-

মূল শব্দ

শব্দ গঠন

ব্যবহারিক অর্থ

পঙ্কজ

পঙ্কে জন্মে যা

পদ্মফুল

রাজপুত

রাজার পুত্র

একটি জাতি বিশেষ, ভারতের একটি জাতি

মহাযাত্রা

মহাসমারোহে যাত্রা

মৃত্যু

জলধি

জল ধারণ করে যা/ এমন

সাগর

 

 

]৪. নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ: বিভিন্ন বিদেশি শব্দের অনুকরণে ভাবানুবাদমূলক যেসব প্রতিশব্দ সৃষ্টি করা হয়েছে, সেগুলোকে নবসৃষ্ট বা পরিশব্দ বা পারিভাষিক শব্দ বলে। মূলত প্রচলিত বিদেশি শব্দেরই এরকম পারিভাষিক শব্দ তৈরি করা হয়েছে।

যেমন-

 

পারিভাষিক শব্দ

মূল বিদেশি শব্দ

পারিভাষিক শব্দ

মূল বিদেশি শব্দ

অম্লজান

Oxygen

সচিব

Secretary

উদযান

Hudrogen

স্নাতক

Graduate

নথি

File

স্নাতকোত্তর

Post Graduate

প্রশিক্ষণ

Training

সমাপ্তি

Final

ব্যবস্থাপক

Manager

সাময়িকী

Periodical

বেতার

Radio

সমীকরণ

Equation

মহাব্যবস্থাপক

General Manager

 

 

 

[কিন্তু, যেসব বিদেশি শব্দ আমাদের ভাষায় প্রচলিত হয়ে গেছে, আমাদের ভাষায় ঢুকে গেছে, সেগুলোও বাংলা ভাষার শব্দ; সেই শব্দগুলোও আমাদের ভাষার সম্পদ। সমৃদ্ধ শব্দভাণ্ডার একটি সমৃদ্ধ ভাষার সবচেয়ে বড়ো লক্ষণ। যে ভাষার শব্দভাণ্ডার যতো বড়ো, সেই ভাষা ততো বেশি সমৃদ্ধ ও উন্নত ভাষা। আর শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধির একটি প্রধান কৌশল বিদেশি শব্দ আত্মীকরণ বা গ্রহণ। আর তাই বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের ভাবানুবাদমূলক কঠিনতর পরিভাষা তৈরি করা নিষ্প্রয়োজন। এবং তা সাধারণ মানুষ গ্রহণও করে না। ভাষায় তা-ই টিকে থাকে, যা সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে। মানুষ কখনো বলে না, ‘আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে অম্লজান গ্রহণ করি।’ বলে, ‘আমরা নিশ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন গ্রহণ করি।’]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন
 

  • ‘পোলাও’ শব্দটি (ঘ-১৯৯৯-২০০০)
  • ‘বোম্বেটে’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে আগত? (ঘ-২০০১-০২)
  • ‘তৎসম’ শব্দ দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে? (ঘ-২০০১-০২)
  • ‘কাজ’ শব্দের তৎসম রূপ (ঘ-২০০২-০৩)
  • ‘দালাল’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে (ঘ-২০০৩-০৪)
  • দেশি শব্দ কোনটি? (ঘ-২০০৩-০৪)
  • ‘আইনজীবী’ শব্দটি কোন দুইয়ের যোগফল? (ঘ-২০০৪-০৫)
  • আঁতাত শব্দটি (ঘ-২০০৪-০৫)
  • তদ্ভব শব্দগুচ্ছ (ঘ-২০০৫-০৬)
  • কোন শব্দটি সংস্কৃত-ফারসির মিশ্রণ? (ঘ-২০০৫-০৬)
  • আরবি শব্দ নয় (ঘ-২০০৮-০৯)
  • ‘রাজপুত’ কোন শ্রেণীর শব্দ? (ক-২০০৫-০৬)
  • অর্ধ-তৎসম কোনটি? (ক-২০০৫-০৬)
  • কোন শব্দটি ইংরেজি থেকে বাংলায় এসেছে? (ক-২০০৫-০৬)
  • তহবিল’কোন ভাষার শব্দ? (ক-২০০৬-০৭)
  • আরবি থেকে আগত শব্দ- (ক-২০০৬-০৭)
  • ‘জাঁদরেল’ শব্দটির মূল- (ক-২০০৬-০৭)
  • ‘রিকশা’ কোন ভাষার শব্দ? (ক-২০০৬-০৭)
  • কোনটি দেশি শব্দ নয়? (ক-২০০৭-০৮)
  • ‘সন্দেশ’ অর্থগত দিক দিয়ে কোন শ্রেণীর শব্দ? (ক-২০০৭-০৮)
  • ‘পঙ্কজ’- অর্থগত দিক থেকে কোন শ্রেণীর শব্দ? (ক-২০০৮-০৯)
  • আরবি ভাষা থেকে আগত শব্দ (ক-২০০৯-১০)
  • মৌলিক শব্দ কোনটি? (গ-২০১০-১১)
  • ‘পেয়ারা’ শব্দটি কোন ভাষা হতে আগত? (গ-২০০৯-১০)
  • নিচের কোনটি মৌলিক শব্দ? (গ-২০০৭-০৮)
  • ‘রিকশা’ শব্দটি: (গ-২০০৫-০৬)
  • কোনটি খাঁটি বাংলা শব্দ? (গ-২০০৫-০৬)
  •  ‘বালতি’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে বাংলা ভাষায় এসেছে: (গ-২০০৪-০৫)
  • যোগরূঢ় শব্দের উদাহরণ- (গ-২০০৩-০৪)
  • কোনটি তদ্ভব শব্দ? (গ-২০০১-০২)