প্রারম্ভিক আলোচনা: এই অধ্যায় থেকে অপেক্ষাকৃত কম প্রশ্ন আসে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে রাখা প্রয়োজন। (পাঠ্য বই-এ ঈস্ট বানানটি ব্যবহার করা হলেও বিদেশি শব্দ বাংলায় লেখার নিয়মানুসারে “ইস্ট” লেখা হল)

অধ্যায় সারবস্তু:

১. ছত্রাক সম্পর্কিত বিদ্যাকে মাইকোলজি বলা হয়। (ছত্রাক বা ফানজাই-এর বিদ্যাকে ফাইকোলজি বলা যেতে পারতো, কিন্তু গ্রিক ভাষায় ছত্রাক কে “মিউকেস” বলা হয়, সেই হিসেবে মাইকোলজি বলা হয়)

২. কোষপ্রাচীর কাইটিন নির্মিত এবং সঞ্চিত খাদ্য গ্লাইকোজেন। (কাইটিন গ্লুকোজ থেকে তৈরি হওয়া একধরনের পলিমার অণু, আর্থোপোডার বহিঃআবরণেও এটি পাওয়া যায়)

৩. ফানজাই বা ছত্রাককে প্যঁচটি ফাইলামে ভাগ করা হয়েছে। যথা:

ক. জাইগোমাইকোটা (জাইগোট তৈরিকারী ছত্রাক)

খ. অ্যাস্কোমাইকোটা (অ্যাস্কাস তৈরিকারী ছত্রাক)

গ. ব্যাসিডিওমাইকোটা (ব্যাসিডিয়া তৈরিকারী ছত্রাক)

ঘ. ডিউটেরোমাইকোটা

ঙ. মাইকোফাইকোফাইটা

৪. অ্যাস্কোমাইকোটার গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ: Saccharomyces (ইস্ট), penicillium (অ্যান্টিবায়োটিক)

৫. ইস্টে সাধারণত মুকুলোদ্‌গমের মাধ্যমে বংশ বিস্তার ঘটে।

৬. ইস্টের ভিতর কোষগহবরে ভলিউটিন নামক ঘন দানাদার পদার্থ দেখা যায়।

৭. ইস্ট কোষে সাধারণত ক্রোমোসোম সংখ্যা ৮ টি। ডিপ্লয়েড অবস্থা হলে ১৬ টি ক্রোমোজেম থাকে।

৮. ইস্ট থেকে জাইমেজ এনজাইম পাওয়া যায় যা মদ শিল্পে শর্করা থেকে অ্যালকোহল (ইথানল) উৎপাদনে কাজে লাগে।

৯. প্রতিকূল অবস্থায় শর্করার পরিমাণ কমে গেলে ইস্টে অযৌন জনন ঘটে। এমন অবস্থায় যৌন জননও ঘটে থাকে। উভয় প্রক্রিয়াতে অ্যাস্কাস তৈরি হয়। অ্যাস্কাসে ৪ বা ৮ টি অ্যাস্কোস্পোর থাকে।

১০. কোষের অভ্যন্তরে বৃহৎ গহ্‌বরে ভলিউটিন নামক দানাদার পদার্থ থাকে।

১১. ইস্টের ক্রোমোসোম সংখ্যা ৮, পরে ১৬ হয়ে যায়।

১২. ওয়াইন শুধুমাত্র আঙ্গুরের রস থেকেই তৈরি করা হয়। আঙ্গুরের রসের সাথে ইস্ট (যেমন, S. cerevisiae ) ব্যবহার করা হয়, যার নিঃসৃত জাইমেজ এনজাইম আঙ্গুরের রসে থাকা শর্করা থেকে ফার্মেন্টেশন প্রক্রিয়ায় অ্যালকোহল প্রস্তুত করে।

১৩. ইস্ট থেকে ভিটামিন বি, ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। (E. coli থেকে ভিটামিন বি, বি, ই এবং কে (“BEK”) পাওয়া যায়।)

১৪. ইস্ট নিঃসৃত “ইনভার্টেজ” এনজাইম শর্করাকে বিশ্লিষ্ট করে গ্লুকোজ ও লেভুলোজ উৎপাদন করে। (ইনভার্ট করে অন্যান্য শর্করা যেমন ফ্রুক্টোজ, সুক্রোজ ইত্যাদিকে গ্লুকোজে, তাই এনজাইমের নাম ইনভার্টেজ)

১৫. Penicillium “কনিডিয়া” নামক স্পোর তৈরি করে, যার জন্য সবুজ বা নীল রং দেখা যায়।

১৬. হাইফা সম্মিলিতভাবে বহু শাখা-প্রশাখ বিশিষ্ট যে শরীর সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় মাইসেলিয়াম। কোন কোন হাইফিতে “রাইজয়েড” (অনুন্নত মূল) উৎপন্ন হয়, যা দিয়ে পুষ্টি আহরণ করে।

১৭. ১৯২৯ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং সর্বপ্রথম Penicillium notatum থেকে অ্যান্টিবায়োটিক পেনিসিলিন আবিষ্কার করেন।

(এটি আবিষ্কারটি একটি দুর্ঘটনা ছিল, ফ্লেমিং ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করার সময় হঠাৎ কালচারে ওনার সর্দি পড়ে যায়, পরে দেখা যায় যে যেসব জায়গায় সর্দি পড়েছিল, সেখানে ব্যাকটেরিয়া মরে গেছে, তারপর উনি গবেষণা করে বুঝতে পারেন যে এর জন্য Penicillium নামক ছত্রাক দায়ী।)

১৮. বাণিজ্যিক ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন করা হয় প্রধানত Penicillium chrysogenum থেকে।

১৯. Saprolegnia একটি জলজ ছত্রাক বা ওয়াটার মোল্ড। (Sapr অর্থ পঁচা আর legnon অর্থ বর্ডার, অর্থাৎ পঁচনশীল বস্তুর বর্ডারে এই ছত্রাক সাধারণত পাওয়া যায়)

২০. জীবন্ত মাছ ও ডিমে স্যামন রোগ ঘটিয়ে Saprolegnia parasitica মহামারী সৃষ্টি করতে পারে।

২১. Saprolegnia এর প্রতিটি হাইফা প্রস্থপ্রাচীর বিহীন এবং সিনোসাইটিক অর্থাৎ একই কোষে অনেকগুলো নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট।

২২, Saprolegnia তে অযৌন ও যৌন উভয় প্রক্রিয়া বংশবৃদ্ধি ঘটে। অযৌন জনন জুওস্পোর ও গিমি দিয়ে সাধিত হয়। দু’ধরনের জুওস্পোর হয় বলে একে ডাইপ্লানেটিক ছত্রাক বলা হয়। (জুওস্পোর হল ফ্লাজেলা থাকা সচল স্পোর আর গিমি অনেকটা মুকুলোদ্‌গমের প্রক্রিয়ার মত)

২৩. যৌন প্রক্রিয়া উওগ্যামাস। (স্ত্রী জননাঙ্গ বা উওগোনিয়াম যদি পুং জননাঙ্গ বা অ্যান্থেরিডিয়াম থেকে অনেক বড় হয়, তখন ওই জনন কে উওগ্যামাস বলা হয়।)

২৪, ব্যাসিডিওমাইসিটিস নামক শ্রেণি সাধারণত মাশরুম বা ব্যাঙের ছাতা হিসেবে পরিচিত। (ব্যাসিডিয়া শব্দটির মানে ছোট Pedestal বা গোল টেবিলের পায়া)

২৫. Agaricus এর দেহ দুই ভাগে বিভক্ত, যথা:

মাইসেলিয়াম: অত্যন্ত শাখা প্রশাখা বিশিষ্ট ও সবসময় মাটির নিচে থাকে, যা আমরা সাধারণত দেখতে পাই না মাটির বাইরে ছত্রাকটিকে না আনলে।

ফ্রুটবডি: এ অংশটি মাটির উপরে থাকে। উপরে ছাতার মত পিলিয়াস এবং ছাতার দণ্ডের মত স্টাইপ। পিলিয়াস-এর নিচের দিকে গিল বা ল্যামেলি থাকে। গিল বা ল্যামেলি থেকেই টেবিলের পায়ার মত দেখতে ব্যাসিডিয়া থাকে।

২৬. Agaricus xanthodermus খুবই বিষাক্ত, এটি খেলে মৃত্যুও হতে পারে।

২৭. Deuteromycota কে ফানজাই ইমপারফেকটাই (অপূর্ণাঙ্গ ছত্রাক, কারণ এদের যৌন জনন হয় না) বলা হয়।

২৮. Helminthosporium সৃষ্ট রোগ:

ধানের পাতায় বাদামী ছিটে পড়া রোগ সৃষ্টি করে Helminthosporium oryzae

কাণ্ডপঁচা রোগ হয় Helminthosporium sigmoideum ছত্রাক দ্বারা।