প্রারম্ভিক আলোচনা: অধ্যায়টা গুরুত্বপূর্ণ।
অধ্যায় সারবস্তু:
ম্যালেরিয়ার পরজীবীর শ্রেণিবিন্যাস:
পর্ব = Protozoa (প্রোটোজোয়া)
শ্রেণী = Sporozoa (চলনাঙ্গহীন অন্তঃপরজীবী)
বর্গ = Haemosporidia (সন্ধিপদ প্রাণিদেহে নিষেক ঘটে)
গোত্র = Plasmodiidae (মেরুদণ্ডী প্রাণিদেহে গ্যামিটোসাইট তৈরি হয়)
গণ = Plasmodium
প্রজাতি = Plasmodium vivax
১. প্রতিবছর ৩০০-৫০০ মিলিয়ন মানুষ ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়।
২. ফরাসী সেনাবাহিনীর ডাক্তার চার্লস ল্যাভেরন সর্বপ্রথম ম্যালেরিয়া রোগের কারণ রূপে প্রোটোজোয়ার উপস্থিতির কথা ঘোষণা করেন।
৩. রোনাল্ড রস ঘোষণা করেন যে অ্যানোফিলিস মশকী ম্যালেরিয়ার পরজীবী বহন করে। ১৯০২ সালে নোবেল পুরষ্কার পান।
৪. চার প্রকার ম্যালেরিয়ার প্রজাতি রয়েছে:
ম্যালেরিয়ার প্রকারভেদ |
রোগসৃষ্টিকারী পরজীবী |
জ্বর আসার সময় |
রোগের সুপ্তাবস্থা |
বিনাইন টারসিয়ান ম্যালেরিয়া |
Plasmodium vivax |
৪৮ ঘণ্টা পর পর |
১২-২০ দিন |
ম্যালিগন্যান্ট টারসিয়ান ম্যালেরিয়া |
Plasmodium falciparum |
৩৬-৪৮ ঘণ্টা পর পর |
৮-১৫ দিন |
মাইল্ড টারসিয়ান ম্যালেরিয়া |
Plasmodium ovale |
৪৮ ঘণ্টা পর পর |
১১-১৬ দিন |
কোয়ারটান ম্যালেরিয়া |
Plasmodium malariae |
৭২ ঘণ্টা পর পর |
১৮-৪০ দিন |
[ছকটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখার কিছু উপায়:
- P. “malariae” পরজীবী যে ম্যালেরিয়া করে, সেখানে “টারসিয়ান” শব্দটা নেই
- বিনাইন অর্থ মৃদু, মাইল্ড-ও মৃদু বোঝায়, এদের প্রজাতির নাম ছোট: vivax এবং ovale
- ম্যালিগন্যান্ট হল তীব্র ম্যালেরিয়া, তাই রোগের সুপ্তাবস্থা কম (৮-১৫ দিন), জ্বর আসার সময়ও কম (৩৬-৪৮ ঘণ্টা), প্রজাতির নামটাও বড়, “ falciparum”
- কোয়ারটান রোগ (যাতে কোন টারসিয়ান শব্দ নেই)-এর সুপ্তাবস্থা সবচেয়ে বেশি (১৮-৪০ দিন), জ্বর আসার সময়ও বেশি (৭২ ঘণ্টা)]
৫. ম্যালেরিয়ার পরজীবীর জীবনচক্র সম্পন্ন করতে দু’টি পোষকের হয়। একটি হচ্ছে স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা এবং অন্যটি মানুষ।
৬. যে পোষকে পরজীবীর যৌন প্রজনন ঘটে, তাকে মুখ্য বা নির্দিষ্ট পোষক বলে। এবং যে পোষকে পরজীবীর অযৌন প্রজনন ঘটে, তাকে গৌণ বা মাধ্যমিক পোষক বলে। যেমন, ম্যালেরিয়ার পরজীবীর ক্ষেত্রে মানুষ গৌণ পোষক এবং মশকী মুখ্য পোষক।
৭. মস্তিষ্কের তাপ সংবেদী অঞ্চল থাকে হাইপোথ্যালামাস-এ। এখান থেকে ভেসোমোটর স্নায়ুতে সিগনাল (প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন, মনো-অ্যামাইন) গেলে দেহের তাপ বৃদ্ধি হয়ে জ্বর হয়।
৮. মানবদেহে জীবনচক্র:
- Plasmodium এর অযৌন চক্রকে সাইজোগনি বলে। দু’টি জায়গায় সাইজোগনি হয়, এই ভিত্তিতে সাইজোগনিকে দু’টি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে:
o হেপাটিক সাইজোগনি
o এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি
- হেপাটিক সাইজোগনি তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত:
o প্রি-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি (প্রি বলতে আগে, যেমন প্রি+টেস্ট)
o এক্সো-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি
o পোস্ট-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি
- মানবদেহে প্রবেশকৃত ম্যালেরিয়ার পরজীবীর প্রথম ধাপ = স্পোরোজয়েট
- জীবাণুর বহু নিউক্লিয়াস যুক্ত অবস্থার নামই সাইজন্ট।
- ক্রিপ্টোমেরোজয়েট সৃষ্টি হয় প্রি-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনির শেষ ধাপে। পরে এক্সো-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনিতে মাইক্রো (ক্ষুদ্র) ও ম্যাক্রো (বড়) ক্রিপ্টোমেরোজয়েট-এ পরিণত হয়।
- এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি-এর বিভিন্ন ধাপ:
o ট্রফোজয়েট
o সিগনেট রিং (মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ)
o অ্যামিবয়েড ট্রফোজয়েট
o সাইজন্ট (প্রি-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনি তেও এই ধাপটি রয়েছে)
o মেরোজয়েট (প্রি-এরিথ্রোসাইটিক সাইজোগনিতে ক্রিপ্টোমেরোজয়েট দেখা যায়)
o গ্যামেটোসাইট
- আকারে ক্ষুদ্র কিন্তু বড় নিউক্লিয়াস যুক্ত = পুং গ্যামিট বা মাইক্রোগ্যামেটোসাইট (আকারে ক্ষুদ্র = মাইক্রো)
- আকারে বড় কিন্তু নিউক্লিয়াস ছোট = স্ত্রী গ্যামিট বা ম্যাক্রোগ্যামেটোসাইট (আকারে বড় = ম্যাক্রো)
- মানুষের রক্তে গ্যামেটোসাইট ৭ দিনের বেশি বাঁচে না।
৯. মশকীর দেহে জীবনচক্র:
গ্যামিটোগনি : (যৌন জনন ঘটে)
- মাইক্রোগ্যামেটোসাইট বা পুং গ্যামিট-এর নিউক্লিয়াস ৪-৮ টি অপত্য নিউক্লিয়াস তৈরি করে।
- ম্যাক্রোগ্যামেটের প্রান্তসীমায় “কোণ” সৃষ্টি হয়, যা দিয়ে পুং গ্যামিট স্ত্রী গ্যামিট-এ প্রবেশ করে নিষেক ক্রিয়া করে।
- নিষেকের পর জাইগোট থেকে উওকিনেট তৈরি হয়।
- জাইগোট থেকে শুরু করে, উওকিনেট হয়ে উওসিস্ট হল ডিপ্লয়েড অবস্থা।
স্পোরোগনি : (অযৌন জনন ঘটে)
- মশকীর ক্রপের প্রাচীরে উওসিস্ট-এর অযৌন প্রজনন ঘটে, ফলে হ্যাপ্লয়েড “স্পোরোজয়েট” পরিণত হয়। এই ধাপটিই মানবদেহে প্রবেশকৃত ম্যালেরিয়ার পরজীবীর প্রথম ধাপ।
১০. ম্যালেরিয়ার জীবাণুতে সুস্পষ্ট জনুক্রম দেখা যায়।
১১, পরজীবী দেহের ভিতরে বা বাইরে, যে কোন জায়গাতেই বাস করতে পারে। আজীবন হতে পারে, আবার জীবনের এক বা একাধিক পর্যায়ের জন্যও হতে পারে।
১২. পুং ও স্ত্রী গ্যামেটোসাইট তৈরি হয় মানুষের দেহে, এবং মশকীর দেহে তৈরি হয় গ্যামেটোসাইট থেকে পুং ও স্ত্রী গ্যামেট। (গ্যামেটোসাইট থেকে গ্যামেট)