প্রারম্ভিক আলোচনা:
অধ্যায়টিতে অনেক কিছু পড়ার আছে। ধৈর্য্য ধরে অধ্যায়টি পড়তে হবে। এখান থেকে প্রায়ই প্রশ্ন আসে।
অধ্যায় সারবস্তু:
১. মানুষসহ উন্নততর প্রাণিদেহে প্রধানত চার প্রকারের টিস্যু বা কলা থাকে। যথা:
- আবরণী কলা বা এপিথেলিয়াম টিস্যু
- যোজক কলা বা কানেকটিভ টিস্যু
- পেশী কলা বা মাসকুলার টিস্যু
- স্নায়ু কলা বা নার্ভাস টিস্যু
২. যোজক কলা মূলত তিন প্রকার:
- প্রকৃত ( বিভিন্ন প্রকার কোষ যেমন: অ্যারিওলার, শ্বেততন্তুময়, পীততন্তুময়, মেদ )
- কঙ্কাল ( তরুণাস্থি ও অস্থি )
- তরল ( রক্ত ও লসিকা)
৩. মেসোডার্ম নামক ভ্রূণস্তর থেকে এ কলার উৎপত্তি।
৪. যোজক কলার মধ্যে রক্ত ও লসিকা, যা তরল যোজক কলা, বিভিন্ন পদার্থের পরিবহনে অংশ নেয়, দেহে প্রবিষ্ট ক্ষতিকারক বস্তু ও জীবাণু থেকে দেহকে রক্ষা করে।
৫. যোজক কলা ক্ষত নিরাময়ে অংশগ্রহণ করে। (অ্যারিওলার প্রকৃত যোজক কলা) দেহের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রকৃত যোজক কলা :
৬. অ্যারিওলার টিস্যু: (গুরুত্বপূর্ণ)
à ফাইব্রোব্লাস্ট: ক্ষতস্থান নিরাময়ে অংশগ্রহণ করে।
à রঞ্জক কোষ মেলানিন তৈরি করে। (মেলানিন-এর জন্য আমাদের গায়ের রঙ কালো হয়, রঞ্জক কোষের কথা এভাবে মনে রাখা যেতে পারে)
à মাস্ট কোষ হেপারিন তৈরি করে রক্ত তঞ্চন বা রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। (মাস্ট কোষ হিস্টামিন ও হেপারিন তৈরি করে)
à হিস্টিওসাইট জীবাণু গ্রাস করে। (হিস্টো=টিস্যু, হিস্টিওসাইট হল টিস্যুর কোষ, যা জীবাণু কে গ্রাস করে)
à প্লাজমা কোষ অ্যান্টিবডি তৈরি করে। (মূলত প্লাজমা কোষের বি-লিম্ফোসাইট নামক শ্বেতকণিকা অ্যান্টিবডি তৈরি করে)
৭. শ্বেত-তন্তুময় যোজক কলা: ফ্রাইব্রোব্লাস্ট কোষ থেকে উৎপন্ন হয় ও কোলাজেন নামক প্রোটিনে তৈরি। এর স্থিতিস্থাপকতা নেই।
৮. পীত (হলুদ) তন্তুময় যোজক কলা: ইলাস্টিন নামক প্রোটিনে গঠিত। ইলাস্টিক মানেই স্থিতিস্থাপক, এদের স্থিতিস্থাপকতা রয়েছে।
৯. মেদ কলার কেন্দ্রস্থলে বড় গহ্বর থাকে। ম্যাট্রিক্সে কোষের সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি। মেদ বিজারিত হলে প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়।
১০. প্রকুত যোজক কলার অবস্থান:
প্রকৃত যোজক কলা |
অবস্থান |
অ্যারিওলার কলা |
o দেহত্বকের নিচে o পেশীসমূহের মধ্যবর্তীস্থানে o পাকস্থলী o রক্তবাহিকা (ধমনীর প্রাচীর কিন্তু অন্য কলা) o অন্ত্র |
শ্বেত-তন্তুময় যোজক কলা |
o দেহত্বকের নিচে (অ্যারিওলার টিস্যুর মতই) o অন্ত্রপ্রাচীরে ধারাবাহিক স্তর রূপে |
পীত-তন্তুময় যোজক কলা |
o সন্ধিবন্ধনী o স্বরযন্ত্র o ধমনীর প্রাচীর (রক্তবাহিকাকে স্থিতিস্থাপক করে ও অত্যাধিক প্রসারণ দমন করে রক্তচাপের সাম্যাবস্থা বজায় রাখে) o ফুসফুস (ফুসফুস সংকোচন ও প্রসারণে সাহায্য করে) |
মেদ কলা |
o ত্বকের নীচে o হলুদ অস্থিমজ্জায় (পীত তন্তুময় যোজক কলা নয় কিন্তু) o স্তনগ্রন্থিতে (যা এক প্রকার মেদ) o বৃক্কের চারিদিকে |
কঙ্কাল যোজক কলা:
১১. কঙ্কাল যোজক কলা দু’ধরণের: তরুণাস্থি এবং অস্থি
১২. তরুণাস্থি “কনড্রিন” নামক কঠিন ও স্থিতিস্থাপক পদার্থে গঠিত। এজন্যই তরুণাস্থি কোষকে “কোনড্রোসাইট” বলে।
১৩. তরুণাস্থি তে কিছু গহ্বর দেখা যায়, এদের ল্যাকুনা বলে। (লেক থেকে ল্যাকুনা)
১৪. তরুণাস্থি চার ধরনের। এর অবস্থান নিচে দেয়া হল:
তরুণাস্থি |
অবস্থান |
স্বচ্ছ বা হায়ালিন তরুণাস্থি |
স্তন্যপায়ীর নাক শ্বাসনালী স্বরযন্ত্র ব্যাঙ বা হাঙরের ভ্রূণে বা পরিণত দেহে |
স্থিতিস্থাপক বা পীত-তন্তুময় তরুণাস্থি |
বহিঃকর্ণ বা পিনা (কানের যে অংশ বাইরে দেখা যায়) আল্জিহবা ইউস্টেশিয়ান নালী (কান ও গলা সংযোগকারী নালী) |
শ্বেত তন্তুময় তরুণাস্থি |
দু’টি কশেরুকার মধ্যবর্তী অঞ্চল |
চুনময় বা ক্যালসিফাইড তরুণাস্থি |
হিউমেরাস ও ফিমার-এর মস্তকে (হিউমেরাস হল হাত-এর উপরের দিকের লম্বা অস্থি ফিমার হল পা-এর উপরের দিকের লম্বা অস্থি) |
১৫. অস্থি দেহের সর্বাপেক্ষা সুদৃঢ় কলা।
১৬. অস্থি ম্যাট্রিক্স-এ ৪০% জৈব পদার্থ এবং ৬০% অজৈব পদার্থ।
১৭. অস্থির জৈব অংশ কোলাজেন ও অসিমিউকয়েড দ্বারা গঠিত। এবং অজৈব অংশ ক্যালসিয়াম ফসফেট ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট নিয়ে গঠিত।
১৮. অস্থির কেন্দ্রীয় নালীকে “হ্যাভারসিয়ান নালী” বলে।
১৯. অস্থিকোষকে অস্টিওসাইট বলে যা পেরিঅস্টিয়াম নামক তন্তুময় যোজক কলা দ্বারা আবৃত থাকে।
২০. দুই প্রকার অস্থি রয়েছে:
- দৃঢ় বা ঘনসন্নিবিষ্ট অস্থি: এতে হ্যাভারসিয়ানতন্ত্র বা কেন্দ্রীয় নালিকাতন্ত্র থাকে। উদাহরণ: হিউমেরাস ও ফিমার।
- স্পঞ্জি অস্থি: এতে হ্যাভারসিয়ানতন্ত্র থাকে না। উদাহরণ: চাপা অস্থিগুলোতে ও মাথার খুলি।
২১. অস্থির বিশেষ কাজ: রক্ত থেকে দূষিত বস্তু (যেমন: সীসা, আর্সেনিক) নিষ্কাশন করে।
২২. তরুণাস্থি ও অস্থির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য:
তুলনীয় বৈশিষ্ট্য |
তরুণাস্থি |
অস্থি |
কাঠিন্য |
নমনীয় |
কঠিনতম |
স্থিতিস্থাপকতা |
আছে |
নেই |
ম্যাট্রিক্সের উপাদান |
কনড্রিন |
কোলাজেন |
পেশী কলা :
২৩. পেশী কলা সারকোলেমা নামক ঝিল্লী দ্বারা আবদ্ধ। (সারকো = মাংস)
২৪. পেশী কলার ৭৫% পানি।
২৫. পেশী কলা তিন প্রকার:
- ঐচ্ছিক পেশী বা রৈখিক পেশী বা চিহ্নিত পেশী
- অনৈচ্ছিক পেশী বা মসৃণ পেশী
- হৃদপেশী বা কার্ডিয়াক পেশী (ঐচ্ছিক পেশীর মত বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য, কিন্তু অনৈচ্ছিক পেশীর মত কাজ করে।
২৬. প্রাণিদেহের যে অংশগুলোকে “মাংস” বলা হয়, সেগুলোই রৈখিক বা চিহ্নিত বা ঐচ্ছিক পেশী।
২৭. ঐচ্ছিক পেশীতে অনুপ্রস্থ রেখা পাওয়া যায়।
২৮. মসৃণ বা অনৈচ্ছিক পেশী কোষগুলো “মাকু” আকৃতির।
২৯. ঐচ্ছিক পেশীর পেশীতন্তুতে কয়েকশ নিউক্লিয়াস থাকে, তবে অনৈচ্ছিক পেশীর প্রতি কোষে একটি করে নিউক্লিয়াস থাকে।
৩০. খাদ্যবস্তু মসৃণ পেলীর মাধ্যমে পেরিস্ট্যাল্সিস প্রক্রিয়ায় পৌষ্টিক নালীর উপরের অংশ থেকে নিচের দিকে ধাবিত হয়।
৩১. হৃদপেশীতে ইন্টারক্যালেটেড ডিস্ক থাকে। এটি হৃদপেশী চেনার অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
৩২. ঐচ্ছিক পেশীর সংকোচন ক্ষমতা দ্রুত ও শক্তিশালী, অন্যদিকে অনৈচ্ছিক পেশীর সংকোচন ক্ষমতা মন্থর ও দীর্ঘস্থায়ী।
স্নায়ুকলা :
৩৩. স্নায়ুকলা গঠিত স্নায়ুকোষ বা নিউরোন এব কিছু নিউরোগ্লিয়া নিয়ে।
৩৪. নিউরনের দুইটি প্রধান অংশ রয়েছে: ক) কোষদেহ এবং খ) প্রলম্বিত অংশ
৩৫. প্রলম্বিত অংশ দু’ধরণের:
- ডেনড্রাইট্স: কোষদেহের চারিদিক থেকে সৃষ্ট শাখান্বিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রলম্বিত অংশ।
- অ্যাক্সন: (Axis বা অক্ষ = Axon) কোষদেহ থেকে উৎপন্ন বেশ লম্বা ও শাখাবিহীন তন্তু।
৩৬. অ্যাক্সনের কিছু অংশ:
- অ্যাক্সনের আবরণ = নিউরিলেমা
- নিউরিলেমা ও অ্যাক্সনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে স্নেহ পদার্থের স্তর = মায়েলিন বা মেডুলারী শিথ (আবরণ)
- স্নায়ুতন্তুর মায়েলিন আবরণ বিহীন অংশ = র্যানভিয়ার পর্ব
৩৭. একটি নিউরনের অ্যাক্সন অপর একটি নিউরনের ডেনড্রাইটের সাথে যুক্ত হয়, সংযোগস্থলকে বলে = সিন্যাপ্স।
৩৮. প্রতিটি কোষে একটি মাত্র অ্যাক্সন থাকে, তবে ডেনড্রাইটস অনুপস্থিত, এক বা একাধিক থাকে।
৩৯. কোষদেহ থেকে উদ্দীপনা অ্যাক্সন দিয়ে ডেনড্রাইট হয়ে আরেকটি কোষে পৌছে।
কয়েকটি অঙ্গের কলাস্থান:
৪০. পাকস্থলী:
- মিউকোসা স্তর থেকে রুগী (Rugae) নামক ছোট ছোট অভিক্ষেপ বের হয়।
- মিউকোসায় গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি দেখা যায়। (পাকস্থলীতে গ্যাসট্রিক গ্রন্থি থাকাই স্বাভাবিক)
৪১. ক্ষুদ্রান্ত:
- মিউকোসা থেকে ভিলাই নামক অভিক্ষেপ বের হয়। (পাকস্থলীর ক্ষেত্রে অভিক্ষেপ = রুগী)
- "গবলেট কোষ” মিউকোসাতে পাওয়া যায়।
৪২. যকৃত:
- “লোবিওল” নামক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খণ্ডের সমন্বয়ে যকৃত গঠিত।
- প্রতিটি লোবিওলে ছয় কোণাকার হেপাটিক কোষ থাকে
- কেন্দ্রীয় শিরা থাকে।
৪৩. অগ্ন্যাশয়:
- আইলেটস অব ল্যাঙ্গারহ্যানস থাকে। (আইলেটস বলতে দ্বীপের মত বোঝায়)
৪৪. বৃক্ক:
- বৃক্কের বাইরের দিকের অংশকে “কর্টেক্স” বলে। (গাছের বাকল, বহিঃস্তর)
- ভেতরের দিকের অংশকে বলে “মেডুলা”। (মিড্ল-এ থাকে মেডুলা)
- বৃক্কে নেফ্রন, বোম্যানস ক্যাপসুল, গ্লোমেরুলাস প্রভৃতি থাকে।
৪৫. ফুসফুস:
- অ্যালভিওলাই নামক অসংখ্য বায়ু প্রকোষ্ঠ রয়েছে।