প্রারম্ভিক আলোচনা: অধ্যায়টা গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কিছুই কিছুটা মুখস্ত করে নিতে হবে। মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন কাজের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ উল্লেখ করা হল।
অধ্যায় সারবস্তু:
১. স্নায়ুতন্ত্রের একক নিউরন।
২. যে যান্ত্রিক, রাসায়নিক বা ভৌত পরিবর্তন দেহকে বা দেহের কোন অংশকে উত্তেজিত করে, তাকে উদ্দীপক বলে। আলো, চাপ, তাপ, স্পর্শ প্রভৃতি বাহ্যিক উদ্দীপক আর অক্সিজেন, খাদ্য, পানি, বর্জ্য পদার্থ অভ্যন্তরীণ উদ্দীপক।
৩. মানুষের স্নায়ুতন্ত্রকে দু’ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
- কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র: মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডে অবস্থিত সুষুম্নাকাণ্ড নিয়ে গঠিত।
- প্রান্তীয় স্নায়ুতন্ত্র: তিন প্রকার স্নায়ুকোষ নিয়ে এটি গঠিত:
- সুষুম্না স্নায়ু (৩১ জোড়া)
- করোটিক স্নায়ু (১২ জোড়া)
- সংক্রিয় স্নায়ু: দু’প্রকার - ক) সিমপ্যাথেটিক, খ) প্যারাসিমপ্যাথেটিক
৪. সিমপ্যাথেটিক স্নায়ু বিভিন্ন জৈব প্রক্রিয়ার উদ্দীপনা যোগায় বা সক্রিয় করে। প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ু বিভিন্ন জৈব প্রক্রিয়ার উদ্দীপনাকে দমন করে বা নিষ্ক্রিয় করে।
৫. মস্তিষ্কের প্রধান তিনটি অংশ হল:
- অগ্রমস্তিষ্ক (প্রোসেনসেফালন)
- মধ্যমস্তিষ্ক (মেসেনসেফালন)
- পশ্চাৎমস্তিষ্ক (রম্বেনসেফালন)
৬. কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশের অবস্থান:
সেরেব্রাম |
অগ্রমস্তিষ্ক – টেলেনসেফালন |
থ্যালামাস (হাইপো, এপি, মেটা) |
অগ্রমস্তিষ্ক – ডায়েনসেফালন |
কলিকুলাস (সুপিরিয়র ও ইনফিরিয়র) |
মধ্যমস্তিষ্ক - টেকটাম |
সেরেবেলাম |
পশ্চাৎমস্তিষ্ক – মেটেনসেফালন |
পনস |
পশ্চাৎমস্তিষ্ক – মেটেনসেফালন |
মেডুলা অবলঙ্গাটা |
পশ্চাৎমস্তিষ্ক - মায়েলেনসেফালন |
৭. সেরেব্রাম মস্তিষ্কের খুব গুরুত্বুপূর্ণ অংশ। এর কাজ:
- চিন্তা, বুদ্ধি, ইচ্ছাশক্তি, উদ্ভাবনীশক্তি প্রভৃতি উন্নত মানসিক বোধের নিয়ন্ত্রণ
- সংবেদী অঙ্গ থেকে আসা অনুভূতি গ্রহণ এবং বিশ্লেষণ
- বিভিন্ন সহজাত প্রবৃত্তির নিয়ন্ত্রক
- বাকশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ
- দেহের সব ঐচ্ছিক পেশীর কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ
৮. থ্যালামাস-এর কাজ:
- সংজ্ঞাবহ স্নায়ুর রিলে স্টেশন বা মধ্যবর্তী স্টেশন হিসেবে কাজ করে (স্নায়ু আবেগ -> থ্যালামাস -> সেরেব্রাম)
- চাপ, স্পর্শ, যন্ত্রণা প্রভৃতি স্থূল অনুভূতির কেন্দ্র, আবেগের কেন্দ্র ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গের নিয়ন্ত্রক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে
৯. হাইপোথ্যালামাস দেহতাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
১০. পূর্ণবয়স্ক মানুষে সেরেবেলামের গড় ওজন ১৫০ গ্রাম। এটি দেহের ভারসাম্য রক্ষায়, ঐচ্ছিক চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রেখে থাকে। (সেরেব্রাম ও সেরেবেলাম শব্দ দু’টি কাছাকাছি, সেরেব্রাম লেখতে ছোট কিন্তু কাজে বড়, এভাবে মনে রাখা যেতে পারে)
১১. পন্স স্বাভাবিক শ্বাসক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণ করে।
১২. মেডুলা অবলংগাটা শ্বসন, হৃদস্পন্দন, রক্তচাপ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। এটি চর্বন, লালাক্ষরণ, গলাধঃকরণ, পরিপাক নিয়ন্ত্রণ করে।
১৩. মস্তিষ্ক থেকে সৃষ্ট স্নায়ুকে করোটিক স্নায়ু বলে। মানুষে এদের সংখ্যা ১২ জোড়া। তিন প্রকার স্নায়ু কোষ রয়েছে:
- সংজ্ঞাবহ বা সংবেদী বা সেন্সরি স্নায়ু = যা দেহের বাইরে থেকে পাওয়া স্নায়ু উদ্দীপনা (আলো, তাপ ইত্যাদি) মস্তিষ্কে নিয়ে যায়।
- চেষ্টীয় বা মোটর স্নায়ু = যা স্নায়ু উদ্দীপনাকে মস্তিষ্ক থেকে দেহপ্রান্তের পেশীতে (হাত, পা ইত্যাদি) নিয়ে যায়।
- মিশ্র স্নায়ু = যা বাইরে থেকে পাওয়া স্নায়ু উদ্দীপনা মস্তিষ্কে সংবেদী স্নায়ুর মত নিতেও পারে আবার মস্তিষ্ক থেকে স্নায়ু উদ্দীপনা চেষ্টীয় স্নায়ুর মত দেহের প্রান্তীয় অংশে নিয়ে যায়, অর্থাৎ উভয় স্নায়ুর গুণসম্পন্ন।
১৪. ১২ জোড়া করোটিক স্নায়ু:
ক্রমিক নং |
স্নায়ুর নাম |
প্রকৃতি |
কাজ |
১ |
অলফ্যাক্টরি |
সংবেদী |
ঘ্রাণ |
২ |
অপটিক |
সংবেদী |
দর্শন |
৩ |
অকুলোমোটর |
চেষ্টীয় |
অক্ষিগোলাকের সঞ্চালন |
৪ |
ট্রকলিয়ার |
চেষ্টীয় |
অক্ষিগোলকের সঞ্চালন |
৫ |
ট্রাইজেমিনাল |
মিশ্র |
নেত্রপল্লব, ওষ্ঠ ও চোয়ালের সঞ্চালনে সহায়তা চাপ, তাপ, স্পর্শ ইত্যাদি অনুভূতি গ্রহণ |
৬ |
অ্যাবডুসেন্স |
চেষ্টীয় |
অক্ষিগোলকের সঞ্চালন |
৭ |
ফেসিয়াল |
মিশ্র |
মুখবিবরের সঞ্চালন লালা ও অশ্রু ক্ষরণ আস্বাদন ও ত্বকের অনুভূতিকে সহায়তা |
৮ |
অডিটরী |
সংবেদী |
শ্রবণ ও ভারসাম্য রাখা |
৯ |
গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল |
মিশ্র |
স্বাদগ্রহণ ও জিহ্বার সঞ্চালন |
১০ |
ভেগাস |
মিশ্র |
হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, পাকস্থলী ও স্বরনালীর সঞ্চালন এবং নানা প্রকার অনুভূতি গ্রহণ |
১১ |
স্পাইনাল অ্যাকসেস্রি |
চেষ্টীয় |
মাথা ও কাঁধের সঞ্চালন |
১২ |
হাইপোগ্লোসাল |
চেষ্টীয় |
জিহবার বিচলন |
এই ছকটি মনে রাখা একান্ত আবশ্যক। কিছু পয়েন্ট:
- ১২৮ কোড দিয়ে সংবেদী স্নায়ু মনে রাখা যায়। এছাড়া ৩,৪,৬,১১,১২ হল চেষ্টীয় স্নায়ু এবং মিশ্র স্নায়ুগুলো হল ৫,৭,৯,১০।
- অলফ্যাক্টরী (odor + factory) দিয়ে ঘ্রাণ গ্রহণের কাজ হয়।
- অপটিক, অডিটরী, ফেসিয়াল ইত্যাদির কাজ নাম দেখেই মোটামুটি বোঝা যায়
- অক্ষিগোলক সঞ্চালনের জন্য তিনটি স্নায়ু কাজ করে- অকুলোমোটর, ট্রকলিয়ার, অ্যাবডুসেন্স
- গ্লসো শব্দটির সাথেই জিহ্বার সম্পর্ক আছে, যেমন গ্লসোফ্যারিঞ্জিয়াল ও হাইপোগ্লোসাল স্নায়ু
- ট্রাইজেমিনাল স্নায়ু তিনটি অংশকে সঞ্চালনে ভূমিকা রাখে = নেত্রপল্লব, ওষ্ঠ (উর্ধ্ব ও নিম্ন) এবং চোয়াল
- ভেগাসের কাজ সবচেয়ে বেশি
১৫. সিনাপ্স = দু’টি স্নায়ুর মধ্যে সূক্ষ্ম ফাঁকযুক্ত সংযোগস্থল যেখানে একটি নিউরোনের অ্যাক্সনের প্রান্ত শেষ হয় এবং অন্য একটি নিউরন শুরু হয়, তাকে সিনাপ্স বলে।
১৬. অ্যাক্সনের প্রান্ত ফুলে গিয়ে যে অংশটি গঠন করে, একে সিনাপটিক নব বলে।
১৭. সিনাপটিক নবের সাথে পরবর্তী নিউরনের ২০০ A°-এর মত ফাঁকা জায়গা থাকে, একে সিনাপটিক ক্লেফ্ট বা সিনাপটিক খাঁজ বলে।
১৮. সিনাপটিক নবে সিনাপটিক থলিকা থাকে, যাতে স্নায়ুর প্রেরক (Neuro-transmitter) “অ্যাসিটাইলকোলিন” থাকে (অ্যাসিটাইল+কোলিন)।
১৯. সিনাপ্স দিয়ে উদ্দীপনা পরিবহনে ০.৫ মিলিসেকেন্ড সময় লাগে।