শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে প্রমোশনে রেগুলেশন সংশোধন করেছে।
সংশোধিত রেগুলেশনে প্রথম বর্ষে কমপক্ষে তিনটি তত্ত্বীয় কোর্সে ডি গ্রেড পেলেই দ্বিতীয় বর্ষে উঠতে পারবে শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে প্রমোশনের শর্ত কিছুটা কঠোর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
১৩-০৯-২০১৩ তারিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিএ, বিএসএস, বিবিএস, বিএসসি’র প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখন থেকে এ নিয়মে প্রমোশন পাবে। তবে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে ফেল (এফ গ্রেড) পাওয়া কোর্সগুলো ভর্তির ছয় শিক্ষাবর্ষের মধ্যে অবশ্যই ডি বা উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত করতে হবে।
বিএ, বিএসএস, বিবিএস’র ক্ষেত্রে দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় বর্ষে ৫০ শতাংশ কোর্সে অর্থাৎ ন্যূনতম তিনটি তত্ত্বীয় কোর্সে ডি, তৃতীয় থেকে চতুর্থ বর্ষে প্রমোশনের জন্য ৫০ শতাংশ কোর্সে অর্থাৎ ন্যূনতম চারটি তত্ত্বীয় কোর্সে ডি গ্রেড পেতে হবে।
বিএসসি’র ক্ষেত্রেও দ্বিতীয় বর্ষ থেকে তৃতীয় এবং চতুর্থ বর্ষে প্রমোশনের জন্য একই নিয়ম মানতে হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ষে এফ গ্রেড পাওয়া কোর্সগুলো ভর্তির ছয় শিক্ষাবর্ষের মধ্যে অবশ্যই ডি বা উচ্চতর গ্রেডে উন্নীত করতে হবে। তবে এফ গ্রেড প্রাপ্ত কোর্স পরীক্ষার মাধ্যমে উন্নীত করার ক্ষেত্রে ফলাফল যাই হোক না কেন, একজন পরীক্ষার্থী সর্বোচ্চ বি-প্লাস গ্রেড এর বেশী প্রাপ্য হবে না।
কোন কোর্সে এফ গ্রেড থাকলে পরীক্ষার্থী অনার্স ডিগ্রি পাবে না। তবে রেজিস্ট্রেশন মেয়াদ শেষে কোন পরীক্ষার্থী একাধিক এফ গ্রেডসহ ন্যূনতম ১০০ ক্রেডিট অর্জন করলে তাকে পাস ডিগ্রি প্রদান করা হবে।
আগে দুইবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করার সুযোগ ছিল জানিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বলেন, নতুন নিয়ম একটু কঠিন হলেও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য ভাল হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ১৭ জুলাই ২০১১ সালের প্রথমবর্ষ অনার্স পরীক্ষার ফলাফলে প্রথমবারের মতো গ্রেডিং সিস্টেমে প্রকাশিত ফলে শতকরা ৪৬ ভাগ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য (নট প্রমোটেড) হয়। ফলে দ্বিতীয় বর্ষে উঠতে পারছেন না প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী।
গ্রেডিং পদ্ধতির নিমানুযায়ী কেনো শিক্ষার্থী প্রথমবর্ষের ফলাফলে এক দশমিক ৭৫ জিপিএ পয়েন্ট পেলে দ্বিতীয়বর্ষে উঠার সুযোগ পাবে। ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল।
সনাতন পদ্ধতিতে কোনো শিক্ষার্থী একটি বিষয়ে পাস করেও দ্বিতীয়বর্ষে উঠার সুযোগ পেত। কিন্তু গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফল প্রকাশে শর্ত জুড়ে দেয়ায় বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছে এবং দ্বিতীয়বর্ষে উঠতে পারতেন না।
ফল প্রকাশের পর থেকেই রাজধানীসহ সারা দেশে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থীরা পদ্ধতিসহ প্রমোশনের পদ্ধতি বাতিলের আন্দোলনে নামে।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ২২ জুলাই প্রথমবর্ষের পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা সর্বোচ্চ পাঁচটি কোর্সে শতকরা ৪০ নম্বরের নিচে অর্থাৎ এফ গ্রেড পেয়েছে তাদের বিশেষ বিবেচনায় দ্বিতীয়বর্ষে উঠার সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে শিক্ষার্থীকে পরবর্তীতে এফ গ্রেড প্রাপ্ত কোর্সগুলোতে অবশ্যই উত্তীর্ণ হতে হওয়ারও নিয়ম চালু করা হয়েছিল।
বর্তমানে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফল প্রকাশ করা হচ্ছে।
সম্মানে ইনকোর্স পরীক্ষা
২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষের পর থেকে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণীর ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ বর্ষের প্রত্যেক তত্ত্বীয় কোর্সের ১০০ নম্বরের মধ্যে ইন-কোর্স পরীক্ষা ২০ নম্বরে এবং তত্ত্বীয় ফাইনাল পরীক্ষা ৮০ নম্বরে অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়া ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের জন্য তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে, ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ শিক্ষা বর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের তত্ত্বীয় কোর্সে প্রতি ১০০ নম্বরের মধ্যে ইনকোর্স পরীক্ষা ২০ নম্বরে এবং তত্ত্বীয় ফাইনাল পরীক্ষা ৮০ নম্বরে নেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রত্যেক বর্ষের ক্লাস শুরু থেকে ১৫ সপ্তাহের মধ্যে প্রতিটি কোর্সের অর্ধেক পাঠ্যসূচি শেষ করে পঠিত অংশের উপর কোর্স শিক্ষককে একটি ইনকোর্স পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে। একইভাবে পরবর্তী ১৫ সপ্তাহের মধ্যে পাঠ্যসূচির বাকী অর্ধেক শেষ করে এ অংশের ওপর আর একটিসহ মোট দুটি ইনকোর্স পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
অভ্যন্তরীণভাবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে ইন-কোর্স পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরপত্রের এক কপি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশি¬ষ্ট উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এর নিকট পাঠাতে হবে এবং এক কপি সংশি¬ষ্ট বিভাগীয় প্রধানের অফিসে সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়।