ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
প্রথম প্রকাশ- ১৮৫৪ সালে
মহাকবি কালিদাসের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম’ নাটক অবলম্বনে ‘শকুন্তলা’ উপাখ্যান রচিত।
‘শকুন্তলা’ বিদ্যাসাগরের মৌলিক রচনা নয়।
নির্বাচিত অংশটুকু ‘শকুন্তলা’র প্রথম পরিচ্ছেদের প্রথম অংশ থেকে সংকলিত।
চরিত্র :
রাজা দুষ্মন্ত- প্রধান চরিত্র। ভারতবর্ষের সম্রাট। শকুন্তলার সাথে তাঁর পরিণয় হয়।
সারথি- রাজা দুষ্মন্তের রথের সারথি
দুই তপস্বী- মহর্ষি কণ্বের আশ্রমের দুই তপস্বী ব্রাহ্মণ। রাজা দুষ্মন্তকে সোমতীর্থে যাওয়ার আমন্ত্রণ করেন।
মহর্ষি কণ্ব- শকুন্তলাকে প্রতিপালন করেন।
শকুন্তলা- প্রধান চরিত্র। শকুন্ত পাখি তাকে রক্ষা করে এবং মহর্ষি কণ্ব তাঁকে প্রতিপালন করেন। পরে রাজা দুষ্মন্তের সঙ্গে তাঁর পরিণয় হয়।
অনসূয়া- শকুন্তলার সখি
প্রিয়ংবদা- শকুন্তলার সখি
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও উক্তি
এ আশ্রমৃগ, বধ করিবেন না।– দুই তপস্বী, রাজা দুষ্মন্তকে
আপনকার বাণ অতি তীক্ষ্ণ ও বজ্রসম, ক্ষীণজীবী অল্পপ্রাণ মৃগশাবকের উপর নিক্ষিপ্ত হইবার যোগ্য নহে।
শরাসনে যে শর সংহিত করিয়াছেন, আশু তাহার প্রতিসংহার করুন।
আপনকার শস্ত্র আর্তের পরিত্রাণের নিমিত্ত, নিরপরাধের প্রহারের নিমিত্ত নহে।
ঐ মালিনী নদীর তীরে, আমাদের গুরু মহর্ষি কণ্বের আশ্রম দেখা যাইতেছে; যদি কার্যক্ষতি না হয়, তথায় গিয়া অতিথি সৎকার করুন।
না মহারাজ। তিনি আশ্রমে নাই।– মহর্ষি কণ্ব
মহর্ষি কণ্ব ‘দুর্দৈবশান্তির নিমিত্ত সোমতীর্থে’ গেছেন।
ইহারা আশ্রমবাসিনী; ইহারা যেরূপ, এরূপ রূপবতী রমণী আমার অন্তঃপুরে নাই। বুঝিলাম, আজ উদ্যানলতা, সৌন্দর্যগুণে, বনলতার নিকট পরাজিত হইল।– রাজা দুষ্মন্ত, শকুন্তলা ও তার ২ সখিকে দেখে।
তুমি নবমালিকা, কুসুমকোমলা, তথাপি তোমায় আলবালজলসেচনে নিযুক্ত করিয়াছেন।– অনসূয়া, শকুন্তলাকে।
মহর্ষি অতি অবিবেচক; এমন শরীরে কেমন করিয়া বল্কল পরাইয়াছেন।
শব্দার্থ ও টীকা
দুষ্মন্ত- চন্দ্রবংশীয় রাজা।
সমভিব্যাহারে- সঙ্গে নিয়ে, একত্র গমন
মৃগয়া- বনে গিয়ে হরিণ শিকার
শরাসন- ধনুক
তদীয়- তাঁর
সারথি- রথচালক
কশাঘাত- চাবুকের আঘাত
কিয়ৎক্ষণে- কয়েক মুহূর্তে
তপস্বী- যে তপস্বা করে, যোগী
আশ্রমমৃগ- আশ্রমে বা তপোবনে লালিত-পালিত হরিণ
ত্বরায়- তাড়াতাড়ি
রশ্মি- রশি, বল্গা, লাগাম (অন্য অর্থ- কিরণ)
সংহিত- সংযোগ সাধন
প্রতিসংহার- অস্ত্র ফিরিয়ে নেওয়া বা সংবরণ করা
দীর্ঘায়ুরস্তু- ‘আপনি দীর্ঘজীবী হোন’
অনন্তর- অতঃপর
কণ্ব- মালিনী নদীর তীরে আশ্রমবাসী মুনি। শকুন্তলার পালক পিতা
শকুন্তলা- কণ্বমুনির পালক পিতা। রাজা দুষ্মন্তের প্রেমিকা ও পরে স্ত্রী। মহর্ষি বিশ্বামিত্রের ঔরসে অপ্সরা মেনকার গর্ভে শকুন্তলার জন্ম হয়। জন্মের পর বিশ্বামিত্র মেনকাকে বিদায় দিয়ে তপস্যা করতে চলে গেলে মেনকাও সদ্যজাতা কন্যাকে বনে ফেলে নিজের পথে যাত্রা করেন। তখন শকুন্ত বা ভাসপাখি নিজের পাখনা দিয়ে ঢেকে রেখে শিশুটিকে রক্ষা করতে রাখে। এজন্য বালিকাটির নাম হয় শকুন্তলা। পরে মহামুনি কণ্ব শকুন্তলাকে পেয়ে আশ্রমে নিয়ে গিয়ে লালনপালন করতে থাকেন।
দুর্দৈবশান্তি- দুর্ভাগ্য, দুর্ঘটনা থেকে মুক্তি
সোমতীর্থ- পশ্চিম ভারতের একটি পূণ্যস্থান
সূত- সারথি, রথচালক
ভূপতি- রাজা, নৃপতি
নীবার- উড়িধান, তৃণ্যধান, মুনিদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত
ইঙ্গুলী- আশ্রমের শোভাবর্ধক এক ধরনের গাছ
শান্তরসাস্পদ- সুখ-দুঃখ-রাগ-দ্বেষহীন শমগুণ বিশিষ্ট জায়গা
ঈদৃশ- এরকম
মাদৃশ- আমার মতো
কর্ণকুহর- কানের ছিদ্র
বৃক্ষবাটিকা- নিকুঞ্জ, লতাগৃহ
আলবাল- গাছের গোড়ায় পানি দেওয়ার জন্য তৈরি মাটির ঘের, সিঞ্চন বেষ্টনী
অনিমিষ- অপলক, পলকহীন
আশ্রমপাদপ- আশ্রমের বৃক্ষ
নবমালিকা কুসুমকোমলা- নবমল্লিকা ফুলের মতো কোমল যে নারী, শকুন্তলা
বল্কল- গাছের বাকল, বস্ত্ররূপে ব্যবহৃত বৃক্ষত্বক
সমীরণ- বাতাস
সহকারতরু- সুগন্ধ আমগাছ
সমীপবর্তিনী- নিকটবর্তী হয়েছে এমন নারী
বিটপ- গাছের শাখা, ডাল বা পল্লব (বিটপী- বৃক্ষ, গাছ)
লেখক পরিচিতি :
জন্ম : ১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে
মৃত্যু : ১৮৯১ সালের ২৯ জুলাই, কলকাতায়
শিল্পসম্মত বাংলা গদ্যরীতির জনক
পারিবারিক পদবী ‘বন্দ্যোপাধ্যায়’ (ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)
বিদ্যাচর্চা ও পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতি হিসেবে সংস্কৃত কলেজ থেকে তিনি ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধি পান।
শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার ও আধুনিকায়ন, বাংলার বিভিন্ন জেলায় মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা, বয়স্ক শিক্ষা ও নারী শিক্ষার প্রসার, বিধবা বিবাহ আইন প্রণয়ন ইত্যাদিতে তিনি অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।
বাংলা ভাষায় প্রথম ইংরেজি ভাষার অনুকরণে বিভিন্ন বিরাম চিহ্ন ও যতি চিহ্নের ব্যবহার করেন।
গ্রন্থ :
গদ্যগ্রন্থ : বেতাল পঞ্চবিংশতি, শকুন্তলা, সীতার বনবাস, ভ্রান্তিবিলাস
পাঠ্যবই : বর্ণ পরিচয়
ভাষা অনুশীলন/ব্যাকরণ অংশ
লিঙ্ক- উপসর্গ, সমাস, সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ, ভাষারীতির রূপান্তর (সাধু ও চলিত), বাক্যান্তর (সাধু থেকে চলিত), (নেতি থেকে অস্তি, অস্তি থেকে নেতি), (জটিল থেকে সরল), বানান সতর্কতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন
- মহর্ষি কণ্বের আশ্রম কোন নদীর তীরে অবস্থিত (ক-২০০৭-০৮)
- ‘সহকারতরু’ শব্দের অর্থ- (ক-২০০৭-০৮)
- মহর্ষি কণ্ব আশ্রম ছেড়ে কোথায় গিয়েছিলেন? (ক-২০০৮-০৯)
- শকুন্তলাকে রক্ষা করেছিল (ঘ-২০০৮-০৯)
- ‘শকুন্তলা’ রচনায় উল্লিখিত সোমতীর্থের অন্য নাম- (ঘ- ২০০৬-০৭)
- ‘সূত’ শব্দের অর্থ (ঘ-২০০৫-০৬)
- রাজা দুষ্মন্ত শকুন্তলাকে ‘বনলতা’ বলেছেন যে জন্যে ? (ঘ-২০০৪-০৫)
- ‘বল্কল’ শব্দের অর্থ কোনটি? (ক-২০০৫-০৬)
- ‘আজ উদ্যান লতা সৌন্দর্যগুণে বনলতার নিকট পরাজিত হল।’- এই বাক্যটি কোন লেখকের? (ঘ-২০০০-০১)
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘শকুন্তলা’ গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় কোন সালে? (ক-২০০৬-০৭)
- শিল্পসম্মত বাংলা গদ্যরীতির জনক হিসেবে খ্যাত সাহিত্যিকদের নাম : (গ-২০০৭-০৮)
- ‘ব্রাহ্মণের আশীর্বাদ শিরোধার্য করিলাম’- এ উক্তিটি যে প্রবন্ধ হতে নেয়া হয়েছে তার নাম: (গ-২০০৬-০৭)
- ‘প্রাণভয়’ এর ব্যাসবাক্য হবে: (গ-২০০৬-০৭)
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণ পরিচয়’ প্রকাশিত হওয়ার সাল- (গ-২০০৩-০৪)
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের পারিবারিক পদবি হল (গ-২০০২-০৩)
- ‘মহর্ষি অতি অবিবেচক’- উক্তিটি কে করেছিলেন? (গ-২০০২-০৩)
- নিচের কোনটি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের রচনা নয়? (গ-২০০২-০৩)
- বাংলা গদ্যের জনক কে (গ-২০০২-০১)