রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কাব্যগ্রন্থ- সোনার তরী (নামকবিতা, যে কবিতার নামে কাব্যগ্রন্থের নাম সেই কবিতাকে নামকবিতা বলা হয়।)
ছন্দ- মাত্রাবৃত্ত; ৮ মাত্রার মাত্রাবৃত্ত; পূর্ণ পর্ব ৮ মাত্রা, অপূর্ণ পর্ব ৫ মাত্রা
কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত মনে হতে পারে। কিন্তু শেষ স্তবকের ‘শূণ্য’ শব্দটি দেখিয়ে দেয়, এটি মাত্রাবৃত্ত ছন্দের কবিতা। ‘শূণ্য’ মাত্রাবৃত্তে ৩ মাত্রা, অক্ষরবৃত্তে ২ মাত্রা। সেই হিসাবে অক্ষরবৃত্ত হলে ১ মাত্রা কম পড়তো।
সোনার তরীর ভাবার্থ/ জীবনদর্শন
মহাকালের চিরন্তন স্রোতে মানুষ অনিবার্য বিষয়কে/ মৃত্যুকে বা মহাকালে হারিয়ে যাওয়াকে এড়াতে পারে না, কেবল টিকে থাকে তার সৃষ্ট সোনার ফসল/ তার কর্ম।
একইভাবে, কবির সৃষ্টিকর্ম বা কবিতা কালের সোনার তরীতে স্থান পেলেও ব্যক্তিকবির স্থান সেখানে হয় না। এক অতৃপ্তির বেদনা নিয়ে তাকে অপেক্ষা করতে হয় অনিবার্যভাবে মহাকালের শূণ্যতায় বিলীন হওয়ার জন্য।
‘মহাকাল আমার সর্বস্ব লইয়া যায় বটে, কিন্তু আমাকে ফেলিয়া যায় বিস্মৃতি ও অবহেলার মধ্যে।... সোনার তরীর নেয়ে আমার সোনার ধান লইয়া যায় খেয়াপারে, কিন্তু আমাকে লয় না।’ (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
সোনার তরী কবিতার প্রেক্ষাপট ও ঘটনা
সময়- বর্ষাকাল
স্থান- একটি দ্বীপ। চারিদিকে প্রচণ্ড স্রোত।
ঘটনা- একজন কৃষক তার সোনালি ধান নিয়ে বসে আছে। তার সমগ্র উৎপাদন এই ধানটুকু। ধানটুকু তীরে/ মূল ভূখণ্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌকা দরকার। সে নৌকার জন্য প্রতীক্ষা করতে থাকে। এমনি সময় এক বেপরোয়া মাঝি তার সোনালি নৌকা নিয়ে আসে। সে কৃষককে দেখেও চলে যেতে থাকে। কৃষকের অনুনয়ে সে তার ধান নিয়ে যেতে রাজি হয়। কিন্তু সেই ছোট্ট নৌকায় মাঝির জায়গা হয় না। তার ফসল তীরে পৌছলেও তীরে পৌছতে পারে না ব্যক্তি কৃষক নিজেই।
কবিতায় ‘সোনার ধান’ শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হয়েছে- ২ বার
কবিতায় ‘সোনার তরী’ শব্দবন্ধ ব্যবহৃত হয়েছে- ১ বার
তরীর মাঝি- মহাকালের প্রতীক
বাঁকা জল- কালস্রোতের প্রতীক
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।।
যত চাও তত লও তরণী-পরে।
আর আছে- আর নাই, দিয়েছি ভরে।।
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই- ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূণ্য নদীর তীরে
রহিনু পড়ি-
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।।
শব্দার্থ ও টীকা
ভারা ভারা- বোঝা বোঝা, বহু
ক্ষুরধারা- ক্ষুরের মত ধারালো যে প্রবাহ বা স্রোত
খরপরশা- শাণিত ধারালো বর্শা, এখানে ধারালো বর্ষার মতো বোঝাতে
তরুছায়ামসী-মাখা- গাছপালার কালচে রং মাখা
মসী- কালি, এখানে কালো বা কালচে অর্থে
লেখক পরিচিতি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
জন্ম- ৭ মে ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের (২৫ বৈশাখ ১২৬৮)
মৃত্যু- ৭ আগস্ট ১৯৪১ (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮)
নোবেল প্রাপ্তি- ১৯১৩ সালে (দক্ষিণ এশীয়, এশীয়দের মধ্যে প্রথম নোবেল পান। ইউরোপের বাইরে প্রথম সাহিত্যে নোবেল পান।)
নোবেল পান- ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য (ইংরেজি অনুবাদ, তিনি নিজেই করেন)
শান্তি নিকেতন ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন
গ্রন্থ-
কবিতা- সোনার তরী, চিত্রা, বলাকা, মানসী, কল্পনা
উপন্যাস- নৌকাডুবি, গোরা, ঘরে বাইরে, চার অধ্যায়, শেষের কবিতা
নাটক- রক্তকরবী, রাজা, চিত্রাঙ্গদা, ডাকঘর, চিরকুমার সভা, বিসর্জন
প্রবন্ধ- বিচিত্র প্রবন্ধ, কালান্তর, পঞ্চভূত, সভ্যতার সংকট
অন্যান্য- বাংলা ভাষা পরিচয়, লোক সাহিত্য
ভাষা অনুশীলন/ব্যাকরণ অংশ
লিঙ্ক- সাপেক্ষ সর্বনাম (পদ প্রকরণ), নির্ধারক বিশেষণ (পদ প্রকরণ), ব্যুৎপত্তি, সমোচ্চারিত ভিন্নার্থক শব্দ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত বছরের প্রশ্ন
- ‘চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা’।-‘বাঁকা জল’ কিসের প্রতীক? (ঘ-২০০৮-০৯)
- ‘সোনার তরী’ কবিতার ছন্দ- (ক-২০০৮-০৯)
- ‘খরপরশা’ শব্দের আভিধানিক অর্থ (ক-২০০৭-০৮)
- সোনার তরী কবিতা কোন ছন্দে রচিত? (ক-২০০৬-০৭)
- রবীন্দ্রনাথের লেখা গ্রন্থ কোনটি? (ক-২০০৬-০৭)
- ‘সোনার তরী’ কবিতায় কোন ঋতুর কথা আছে? (ঘ-২০০১-০২)
- রবীন্দ্রনাথের সোনার তরীতে মূলত ব্যক্ত হয়েছে ? (ঘ-২০০৪-০৫)
- ‘সোনার তরী’ কবিতায় ‘সোনার ধান’ কথাটি ব্যবহৃত হয়েছে- (ঘ- ২০০৬-০৭)
- ‘কর্মীর চেয়ে কর্ম অধিক প্রত্যাশিত’- এটি কোন কবিতার ভাবার্থ? (গ-২০১০-১১)
- কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কোন নাটকটি কবি নজরুলকে উৎসর্গ করেছিলেন? (গ-২০০৬-০৭)
- বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম কাব্য ‘বনফুল’ যখন প্রকাশিত হয়, তখন তাঁর বয়স: (গ-২০০৬-০৭)
- কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘সোনার তরী’ কবিতাটি যে স্থানে রচনা করেন তার নাম- (গ-২০০৬-০৭)
- ২০০৬ সনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কততম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়? (গ-২০০৬-০৭)
- ‘শেষের কবিতা’ একটি: (গ-২০০৪-০৫)